বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৩

বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে (৫ম)


বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে (৫ম)


১ম অংশ- http://sottersondhane.blogspot.com/2012/11/blog-post.html (pls click & read)
১ম অংশে পাবেন- নামায কিভাবে একই দিনে হয় ? এর কিছু দলিল ।

২য় অংশ- http://sottersondhane.blogspot.com/2012/11/blog-post_5.html (pls click & read)
২য় অংশে চাঁদ দেখার স্বাক্ষী কয়জন, কোথাকার তার দলিল পাবেন ।

৩য় অংশে বিশ্বে চাঁদ দেখার বিভিন্নতা এবং একই ইবাদতের দিন দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয় । এর কিছু তথ্য পাবেন ।

৪র্থ অংশে প্রথম চাঁদ কোনটা গ্রহনযোগ্য এ নিয়ে ফেকাহ শাস্ত্রের দলিল পাবেন ।  

কুরআন, হাদীস ও সম্মানিত ফকিহগণের সম্মিলিত ফাতওয়া সম্পর্কে উপমহাদেশের যুগ বরেণ্য আলেমগণের সিদ্ধান্তঃ-
                                              
(১৫) উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র “দারুল উলুম দেওবন্দ”-এর গ্রান্ড মুফতি আযিযুর রহমান সাহেব ফতোয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ-এ লিখেছেন- 

অর্থাৎ হানাফী মাযহাব মতে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহনীয় নয় । যদি কোন স্থানে শা’বান মাসের ২৯ তারিখে রমযানের চাঁদ দেখা যায় এবং শরয়ীভাবে তা প্রমাণিত হয় তখন ঐ হিসেবেই সকল স্থানে রোযা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে । যে স্থানের লোকেরা সংবাদ পরে পাওয়ার কারণে শা’বান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে রোযা শুরু করেছে তারাও প্রথমদের সঙ্গে ঈদ করবে এবং প্রথমের একটি রোযা কাযা করবে-(ফাতওয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ, খন্ড-৬, পৃঃ-৩৯৮)

(১৬) জামে’ তিরমীযি-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ মায়ারিফুল মাদানিয়্যাহ্‌ গ্রন্থে আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) একই কথা লিখেছেন। যা নিম্নরূপ-

অর্থাৎ আল্লামা শামী (রঃ) লিখেছেন যে, চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতার বিষয়ে কোন মতবিরোধ নেই । কারণ চাঁদ ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে দেখা যাবে এটাই ভৌগোলিক নিয়মমতবিরোধ কেবল এ ব্যাপারে যে, চাঁদ উদয় স্থলের এ ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে কি হবে না ? এ ক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক হানাফী আলেমের মতে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে এবং প্রত্যেক দেশীয় মানুষ নিজ উদয় স্থল অনুযায়ী আমল করবে । এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশের জন্য জরুরী নয় । তাদের এ মত ফিকহের এ মূল নীতির উপর ভিত্তি করে যে, যে জনপদে এশার ওয়াক্ত হয়না অন্য জনপদের ওয়াক্ত অনুযায়ী সেখানে এশা এবং বিত্‌র নামায ওয়াজিব নয় । দ্বিতীয় মত এই যে, চাঁদ উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয় । এটাই ফিকহের প্রতিষ্ঠিত মত । হানাফী, মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাবের নিকট এটাই গ্রহণীয় । তবে যদি দুই দেশের মধ্যে এতটাই দূরত্ব হয় যে যাতে তারিখ একদিন বা দুইদিন বেশী-কম হয়ে যায় তবে এরকম দুই দেশের মধ্যে চাঁদ উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে । কেননা হাদিসে প্রকাশ্য ভাবে বলা হয়েছে মাস ২৯ দিনের কম এবং ৩০ দিনের চেয়ে বেশী হবেনা । অতএব, যে ক্ষেত্রে হাদিসের ভাষ্যের বিরোধী বিষয় জরুরী হয়ে পড়ে তার উপর আমল করা যাবেনা । এই ব্যাখ্যা রোযা ও ঈদের ক্ষেত্রে । বাকী নামায ও অন্য সব এবাদত যেমন সাহ্‌রী ইফতারী-এর ক্ষেত্রে সর্ব সম্মত মতে উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে । এবং প্রত্যেক দেশীয় লোক নিজ নিজ উদয় স্থলের ভিত্তিতে নামায আদায় করবে এবং ইফতার ও সাহ্‌রী গ্রহণ করবে ।
(মায়ারিফুল মাদানিয়্যাহ, খন্ড-৩, পৃঃ-২৩)

(১৭) একই কথা লিখেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও মুফতি আব্দুল কাবী মুলতানী (রহঃ) তার রচিত ছিহাহ ছিত্তা এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মিফতাহুন্‌ নাজ্‌জাহ্‌” কিতাবে । যার ভাষ্য নিম্নরূপ-

অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইমাম লাইছ ইবনু সা’দ আল মিশরী, অধিকাংশ ফকিহগণ এবং ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার এক মতে রমযানের রোযার ক্ষেত্রে এই রায় দিয়েছেন যে, যখন কোন এক জনপদে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে তখন দুনিয়ার অন্য সকল জনপদে ঐ দেখা গ্রহণীয় হবে । এমনকি পাশ্চাত্য অধিবাসীগণ চাঁদ দেখলে প্রাচ্যের অধিবাসীদের জন্যে ঐ দেখা দলীল হবে । এ সকল মহামান্য ইমামগণের নিকট রমযানের রোযার ক্ষেত্রে চাঁদ উদয় স্থলের ভিন্নতা মোটেই গ্রহণীয় নয় । বরং সমস্ত পৃথিবী এবং সকল উদয় স্থল এক উদয় স'ল হিসেবে গণ্য হবে । এবং সমগ্র পৃথিবী একটি দেশের মতই গন্য হবে । যেখানেই প্রথম চাঁদ দেখা যাবে উক্ত দেখা শরয়ী পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌঁছলে তার ভিত্তিতে সকলের জন্য আমল করা জরুরী হবে । উক্ত দুই দেশের মধ্যে যতই দূরত্ব হোকনা কেন । এমন কি যদি অষ্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার অধিবাসীগণ চাঁদ দেখেন তাহলে ঐ দেখার দ্বারা পাকিস্তান এবং দূর প্রাচ্যবাসীর উপর রোযা রাখা জরুরী হবে-(মিফতাহুন্‌ নাজ্‌জাহ, খন্ড-১, পৃঃ-৪৩২)

(১৮) একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাচীন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাট হাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদীস আল্লামা হাফেজ আবুল হাসান সাহেব তার রচিত মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ তানযীমুল আশ্‌তাতে। যার ভাষ্য নিম্নে উদৃত হল-

অর্থাৎ চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট গ্রহণীয় নয় । শামী কিতাবে এমনটাই রয়েছে । এটাই আমাদের (হানাফীদের) রায় । মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের মতও এটা । অতএব, কোন স্থানে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সর্বত্রই আমল অত্যাবশ্যকীয় হবে (তানযীমুল আশ্‌তাত, খন্ড-১, পৃঃ-৪১)

(১৯) উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও পীর আল্লামা রশীদ আহমদ গোংগুহী (রহঃ)-এর ভাষ্য নিম্নরূপ- 

অর্থাৎ ফিকহের প্রতিষ্ঠিত মতানুসারে রোযা রাখা ও ঈদ করার ব্যাপারে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । প্রাচ্যবাসীর দেখা দ্বারাই পাশ্চ্যাত্যবাসীর উপর আমল জরুরী হবে- (ফাতওয়া-ই-রশিদিয়া, পৃঃ-৪৩৭)

(২০) উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, গবেষক ও পীর আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর ভাষ্য নিম্নরূপঃ-

অর্থাৎ এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য সকল শহর বাসীদের জন্য গ্রহণীয় হবে । ঐ শহরগুলোর সঙ্গে চাঁদ দেখা শহরের যত দুরত্বই হোকনা কেন । এমনকি সর্ব পশ্চিমের চাঁদ দেখার সংবাদ সর্ব পূর্বের মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে পৌছলে ঐ দিনই তাদের উপর রোযা রাখা ফরয হবে- (বেহেশসি- জেওর, খন্ড-১১, পৃঃ-৫১০)

(২১) উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, পীর মুফতী আহমদ রেজা খান বেরলভী (রহঃ)-এর ভাষ্য নিম্নরূপঃ-    

অর্থাৎ আমাদের মাযহাবের ইমামগণের বিশুদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধান্ত এই যে, রমযান ও ঈদের ক্ষেত্রে দুই দেশের দুরত্ব কোন ভাবেই গ্রহণীয় নয় । বরং প্রাচ্যের চাঁদ দেখা পাশ্চাত্যের জন্য দলীল হবে । এমনি করে পাশ্চাত্যের চাঁদ দেখা প্রাচ্যের জন্য দলীল হবে । তবে শর্ত হল শরয়ী পদ্ধতিতে সংবাদ পৌছতে হবে- (ফাতওয়া-ই-রাজাবিয়্যাহ্‌, খন্ড-৪,পৃঃ-৫৬৭)

(২২) ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা, উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, ওলীয়ে কামেল, আল্লামা নেছার উদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ভাষ্য হচ্ছে-

মাসয়ালাঃ পশ্চিম দেশে চাঁদ উঠার সংবাদ বা সাক্ষ্য যদি শরীয়ত সম্মত হয়, তবে সেই সংবাদ পূর্বদেশীয় লোকের প্রতি রোযা রাখা ফরজ হইবে (আলমগীরী) (তরিকুল ইসলাম, খন্ড-২, পৃঃ-১৮৮)
  

(২৪) ফাতওয়ায়ে নাঈমিয়ায় মুফতী আহমদ ইয়ার খান (রহঃ) লিখেন-


এভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মের ১৪৪১ বছরের এ সুদীর্ঘ সময়ে যত ফিকহ গ্রন্থ রচিত হয়েছে সকল গ্রন্থেই অত্র মাসয়ালার ক্ষেত্রে একই রকম সিদ্ধান্ত রয়েছে । পাঠকগণের ধৈর্যচ্যুতির আশংকায় উদৃতি উল্লেখ সংক্ষেপ করে শুধু প্রধান প্রধান গ্রন্থগুলোর বর্ননাসূত্র নিম্নে উল্লেখ করা হল-

বাজ্জাজিয়া, খন্ড ৪, পৃঃ ৯৫; তাতারখানিয়া, খন্ড ১ পৃঃ ৩৬৯; নুরুল ইযাহ, পৃঃ ১২৭; আল কাফী, খন্ড ১ পৃঃ ৪৬৮; বজলুল মাযহুদ ফি হল্লি আবি দাউদ, খন্ড ১১ পৃঃ ১০৭; শাইখ তুসী তাহযীব খন্ড ৪ পৃঃ ১৫৫; মিলাযুল আখবার, আল্লামা মাজলেসী খন্ড ১ পৃঃ ৬২০; তাহযীবুল আহকাম, ফয়েজ কাশানী খন্ড ৪ পৃঃ ১৫৭; ছালছাবিল খন্ড ১ পৃঃ ২০২; ইমদাদুল মুফতি পৃঃ ৫৫; ফতহুল মুলহেম খন্ড ৩ পৃঃ ১১৩; আনওয়ারুল মাহমুদ খন্ড ২ পৃঃ ৭১; আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আব্দুল আ’লা সাবযাওয়ারী মুসতানাদ খন্ড ২ পৃঃ ১৩৩; আয়াতুল্লাহ খুয়ী মুসতানাদুল উরওয়া খন্ড ২ পৃঃ ১২২; ফতোয়া-ই-আযীযিয়া খন্ড ৩ পৃঃ ৪৯ (দারুল উলুম দেওবন্দ); তাফসীরে মাজেদা পৃঃ ১০৭; মারাকীহুল ফালাহ পৃঃ ২০৭; মজমুআ ফতোয়া খন্ড ১ পৃঃ ৩৮১; জরুরী মাসায়েল, মাওলানা রুহুল আমীন বর্ধমানী খন্ড ১ পৃঃ ১৪; জামেউর রমুয পৃঃ ১৫৬; নাহরুল ফায়েক মজমুআয়ে ফতোয়া খন্ড ১ পৃঃ ৩৬৯; তাহতাবী পৃঃ ৫৪০; কিতাবুল মাবছুত, আল্লামা ছারাখছী খন্ড ৩ পৃঃ ১৩৯।  

প্রখ্যাত আলেম ওলামাগণ এ সিন্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এক শহরের মানুষ রমযানের চাঁদ দেখলে অন্য শহরের লোকদের জন্যও চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে । এমনকি পৃথিবীর একেবারে পশ্চিম প্রান্তে চাঁদ দেখা গেছে, এই সংবাদ যদি নির্ভরযোগ্য সূত্রে পূর্ব প্রান্তের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে, তবে তাদের উপর এই দিনে রমযানের রোযা ফরয হবে (সূত্র: দুররুল মুখতার, ২য় জিলদ, পৃষ্ঠ-১০৮; আলগিরী, ১ম জিলদ, পৃঃ-১৯৮; বাহরুর রায়েক, ২য় জিলদ, পৃঃ-২০৭; মাজমাউল আনহুর, ১ম জিলদ, পৃঃ- ২৩৯)

ইমাম আবু হানিফা রহ. এর বক্তব্য ও এটাই এবং তিনিই সঠিক ।     

পৃথিবী একটা, চাঁদ একটা, কোরআন একটা, সমস্ত মুসলিম একজাতি, সবাই এক নবীর উম্মাত, তাহলে ঈদ কেন তিন দিনে করব ? সন্দেহ নিরসনের জন্য বলতে হয় হানাফী মাজহাবসহ তিনটি মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো: নতুন চাঁদ উদয়ের স্থানের বিভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই এবং

সর্বপ্রথম হেলালকেই সারা বিশ্বের সকলের অনুসরণ করতে হবে । ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর অভিমতঃ-

(চলবে)


৬ষ্ঠ অংশ- http://sottersondhane.blogspot.com/2013/05/blog-post_25.html (pls click & read)  

৬ষ্ঠ অংশে ৪ মাযহাবের ইমামদের ফতোয়ার দলিল পাবেন । 

1 টি মন্তব্য: