বিবেগের কাছে প্রশ্ন আমরা কি মুসলমান ?
সকল
প্রশংসা এক আল্লাহর যিনি আমাকে লেখার তৌফিক দান করেছেন । অসংখ্য দুরুদ ও সালাম নবী
মোহাম্মদ সা: এর উপর ।
জন্মগতভাবে আমরা সকলেই নিজেকে মুসলমান বলে জোড়াল দাবী
করি! আসলে
সত্যিকারে আমরা মুসলমান কি ?
আমাদের মুসলমান হওয়ার বাহ্যিক কোন পরিচয় আছে কি বা আমাদের বাহ্যিক কাজ কর্মে
নিজেকে কি মুসলমান বলা যায় ? অনেকে বলবেন আমরা নিয়মিত নামজ, রোজা পালন করি, যাকাত, দান ছদকা দেই তাই আমরা মুসলমান । হাদিসে আছে
কোন
মানুষ এবং শির্ক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল নামায না পড়া (মুসলিম, মেশকাত ৪৮ পৃঃ)
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন
অতএব
দূর্ভোগ সে সব নামাযীর, । যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে (আল মাউন, আয়াত ৪, ৬)
বস্তুতঃ তারা (মুনাফিক প্রকৃতির নামে মুসলমান)
যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায় একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য আর তারা
আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে (নিসা আয়াত ১৪২)
হযরত
সাদ্দাদ ইবনে আউস (রাজিঃ) বলেন, “আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি লোক দেখানো উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ল সে শিরক
করল । যে ব্যক্তি লোক দেখানো উদ্দেশ্যে
রোযা পালন করল সে শিরক করল । আর যে ব্যক্তি লোক দেখানো উদ্দেশ্যে ছদকা করল সেও শিরক করল”–মুসনাদে আহমাদ
১৯/২২১ [আল ফাতহুর রব্বানী]
রাসুল
(সঃ)
বলেন- বিদআতিদের নামায, রোযা, হজ্জ, উমরাহ, জিহাদ, যাকাত এবং ফরজ নফল কোন এবাদতই আল্লাহর নিকট কবুল হবে না ।
তারা ইসলাম থেকে সেরুপ ভাবে খারিজ হয়ে যাবে, যেভাবে আটা থেকে চুল পৃথক হয়ে যায়
(ইবনে মাযাহ ইঃ ফাঃ ১ম খন্ড হাঃ ৪৯)
নিশ্চয়
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং
তার ঠিকানা আগুন । আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই (সূরা মায়েদা, আয়াত ৭২)
যারা ঈমান এনেছে এবং তারা তাদের ঈমানকে
শির্কের সাথে মিশ্রিত করেনি, তাদের
জন্য রয়েছে নিরাপত্তা আর তারাই হল সুপথ
প্রাপ্ত (সূরা
আনআম: ৮২)
তাহলে নামায, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাত, দান সদকা যতই করি না কেন
অন্তরে যদি তাকওয়া না থাকে লোক দেখানো হয় তাহলে মুসলমান না হয়ে জাহান্নামী হতে হবে
।
যাহোক যারা বাহ্যিকভাবে ইবাদত বন্দেগী করে তাদেরকে আমরা
মুসলিম বলব । কিন্তু সে সত্যিকার মুসলমান কি তা একমাত্র আলেমুল গায়ীব অন্তরযামী
মহান আল্লাহ তায়ালা ভাল জানেন ।
তবে যারা বাহ্যিকভাবে ইবাদত বন্দেগী করে না, কুরআন হাদিস
অনুযায়ী চলে না বা যাদের বাহ্যিক কোন ইসলামি পরিচয় নাই তাদেরকে মুসলমান বলা যায় না
। তাদেরকে প্রকৃত মুসলমান হওয়ার জন্য সব সময় আহবান জানাব ।
এখন আমি মুসলমান পুরুষের কিছু বাহ্যিক ছুরুতের কথা উল্লেখ
করব । আমরা পুরুষরা সব সময় নারীদের ছুরুত নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করে থাকি ।
কিন্তু কুরআনে নারিদের আগে পুরুষের কথা উল্লেখ করেছেন
মুমিন
পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত
করবে । এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র । নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ
সম্যক অবহিত (সূরা নূর আয়াত ৩০)
হাদীস
শরীফে বর্ণিত হয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
العينان تزنيان و زناهما النظر চক্ষু দুটিও যেনা করে, আর চক্ষুদ্বয়ের যেনা হল দৃষ্টিপাত করা ।
العينان تزنيان و زناهما النظر চক্ষু দুটিও যেনা করে, আর চক্ষুদ্বয়ের যেনা হল দৃষ্টিপাত করা ।
রাস্তা ঘাট, বাজারে কোন নারীর দিকে পুরুষেরা বিনা প্রয়োজনে
তাকাতে পারবে না । অথচ সচরাচর এর বিপরিত দেখা যায় । অবশ্য নারীরা যদি পরিপূর্ণ
পর্দা করত তবে একটু কম দৃষ্টিপাত হত ।
নারীরা পর্দা করুক বা না করুক পুরুষেরা তাদের দিকে বিনা
প্রয়োজনে তাকাতে পারবে না এটাই শরিয়ার নির্দেশ ।
আবার প্রত্যেকের ঘরের ভিতরের পরিবেশ দেখুন-
আমাদের প্রত্যেকের ঘরেই টিভি, সিডি, কম্পিউটার, ইত্যাদি আছে
। আমরা পরিবারের সকলে একত্রে বসে নাচ, গান, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি নানা রকম
অনুষ্ঠান যা শরিয়ায় হারাম তার প্রতি দৃষ্টিপাত কর্ণপাত করেই চলছি ।
চিন্তা করে দেখুন প্রতিনিয়ত আমরা চোখের যেনা করেই চলছি ।
প্রত্যেক পরিবারে কর্তার দায়ীত্ব চোখের যেনা থেকে তার
পরিবারকে রক্ষা করা । তা কর্তা জিনেও মানে না অধীনস্থ অন্যদেরও বলে না । তাহলে
আমরা মুসলমান হতে পারলাম কই ।
পুরুষের পোষাকের ছুরুত দেখুন-
রাসুল
(সাঃ) বলেন নাভীর নীচে থেকে হাঁটুর উপর
পর্যন্ত অঙ্গটি পুরুষের গুপ্তাঙ্গ (দারা কুতনী ১ম খন্ড ২৩০ পৃঃ)
নবী
(সাঃ) বলেন একজন ঈমানদার ব্যক্তির পরনের কাপড় তার হাঁটু ও পায়ের মাঝ বরাবর থাকবে ।
ঐ নলার মাঝ খান থেকে পায়ের গিরা পর্যন্ত নামলে আপত্তি নেই । কিন্তু গিরা বা গিটের নীচে নামলে তা জাহান্নামের
আগুনে জ্বলবে । এ কথা তিনি (সাঃ) তিনবার বলেন । অতঃপর তিনি বলেন যে ব্যক্তি
গর্ব ভরে তার পরনের কাপড় গিরার নিচে ঝুলিয়ে দেয়, মহান আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার দিকে রাহমাতের নযরে তাকাবেন না (আবু
দাউদ, ইবনে মাজাহ, মেশকাত ৩৭৪ পৃঃ)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কাপড়ের যে অংশ টাখনুর নীচে যাবে তা (টাখনুর নীচের অংশ) জাহান্নামে জ্বলবে
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৭৮৭)
হযরত আবু হুবাইব ইবনে মুগাফফাল গিফারী (রাঃ) মুহাম্মাদ কুরাশীকে লুঙ্গি টেনে চলতে
দেখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন-আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে অহংকারবশত পায়ের নীচে কাপড় ফেলে চলবে সে জাহান্নামে গিয়ে এভাবে চলবে’
(মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ১৫৫৪২)
আবু
হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন যে
ব্যক্তি টাকনুর নীচে ইযার পরবে সে জাহান্নামে যাবে (বুখারী হাঃ ৫৩৬২)
আবু
যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে একদা নবী (সাঃ) বললেন, তিন প্রকার মানুষ আছে, যাদের
সঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামতের দিন কোন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি রহ্মতের
দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পাক-সাফ করবেন না । আর তাদের জন্য ভীষণ কষ্টদায়ক
আযাব নির্ধারিত রয়েছে । আবু যার (রাযিঃ) এ কথা শুনার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, তাদের
জন্য তো অধঃপতন ও ধ্বংস- হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! তারা কারা ? রাসুল (সাঃ) বললেন-
১) যে ব্যক্তি পরিধেয় বস্ত্র
পায়ের গিঁটের নীচে পৌঁছায়, ২) যে ব্যক্তি উপকারের
খোঁটা দেয়, ৩) আর যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম দ্বারা নিজের মাল চালু করার চেষ্টা করে (মুসলিম,
মেশকাত হাঃ ২৬৭৩)
আপনারা কোন রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরুষের পায়ের দিকে তাকিয়ে
দেখুন-
অধিকাংশের টাকনুর নিচে কাপড় দেখতে পাবেন । এমনকি নামাযী
অনেক ব্যাক্তি আছেন মসজিদের আসার পূর্বে বা পরে তার কাপর টাকনুর উপর রাখেন আবার
বেড়োনর সমর টাকনুর নিচে নামিয়ে দেন । তাহলে আমরা মুসলমান হতে পারলাম কই !!!
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাহ্যিক ছুরুতের কথা বলে শেষ করব-
পুরুষের মুখের দাড়ি । এটা সর্ব যুগের সর্ব কালের মুসলিম
জ্ঞাণীদের মতে ওয়াজীব ।
পবিত্র
কুরআনে দাড়ি সম্পর্কে একটি আয়াত আছে- মুসা (আঃ) তাঁর কওমের নিকট ফিরে এসে যখন
দেখলেন তাঁর কওম গোমরা হয়ে গেছে, তখন তিনি হারুন (আঃ) কে প্রশ্ন করলেন এবং হারুন
(আঃ) জবাবে বলেনঃ
“হে আমার মায়ের ছেলে! আমার
দাড়ি ধরো না এবং আমার মাথার চুলও টেনো না”
(ত্বোয়া-হা আয়াত ৯৪)
পূত
পবিত্র সেই সত্তা যিনি জমিন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, মানুষকে এবং যা তারা জানে না তার প্রত্যেককে জোড়ায় জোড়ায়
সৃষ্টি করেছেন (ইয়াসিন আয়াত ৩৬)
উপরের
আয়াত অনুযায়ী দাড়ির মাধ্যমে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-যথাঃ ১) দাড়িযুক্ত মানুষ (পুরুষ) ও
২)
দাড়িবিহীন মানুষ (বিশেষ করে মহিলা)
হাদিসঃ যে সব পুরুষেরা নারীর রুপ ধারণ করে এবং যেসব নারীরা পুরুষের
বেশ ধরে তাদেরকে নবী (সাঃ) লা’নত দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ওদেরকে তোমারা তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও (বুখারী, মেশকাত ৩৮০ পৃঃ)
এ প্রসঙ্গে শয়তানের একটা উদ্ধত ঘোষণাও আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন
। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর সে (আল্লাহকে) বলেছিল, আমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্ধারিত এক অংশকে নিয়ে নেব
। এবং আমি তাদেরকে সরল পথ হতে নিশ্চিতভাবে বিচ্যুৎ করব, তাদেরকে অনেক আশা-ভরসা দেব, এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা চতুষ্পদ জন্তুর কান চিরে ফেলবে
। এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে
। যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে বন্ধু বানায়, সে সুস্পষ্ট লোকসানের মধ্যে পড়ে যায়
। (নিসা আয়াত ১১৮,১১৯)
এবং তাদেরকে আদেশ করব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।’ আয়াতের এ অংশের আলোচনায় আল্লামা শাববীর আহমদ উসমানী রাহ. বলেছেন, ‘দাড়ি মুন্ডানোও এ আকৃতি পরিবর্তনের মধ্যে পড়ে’ (দেখুন: তাফসীরে উসমানী (মূল) পৃ. ১২৫; (অনুবাদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১/৪৪৬)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন, "তোমরা
গোঁফ কর্তন কর এবং দাড়ি ছেড়ে দাও (লম্বা কর) তোমরা অগ্নিপুজারকদের বিপরীত কর" (মুসলিম শরীফ,১/১২৯; মুসলিম ২, ৫১০)
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে দু’জন দূত পাঠান
। এদের দাড়ি ছিল কামানো আর গোঁফ ছিল বড় বড়
।
রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে তাদের এই অবয়ব এতই কুৎসিত লেগেছিল যে তিনি মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের ধ্বংস হোক, এমনটি তোমাদের কে করতে বলেছে
? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা
।
তিনি (সাঃ) তখন উত্তর দেন, আমার রব্ব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি ছেড়ে দেই এবং গোঁফ ছোট রাখি
।(ইবনে জারির আত তাবারি, ইবন সা’দ ও ইবন বিশরান কর্তৃক নথিকৃত
। আল আলবানি একে হাসান বলেছেন
। দেখুন আল গাযালির ফিক্বহুস সিরাহ ৩৫৯ পৃষ্ঠা;
আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/৪৫৯-৪৬০)
দাড়ি বড় করো এবং গোঁফ ছোট করো । (বুখারী ৫৮৯২; মুসলিম : ৬২৫)
বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রাহ. বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসেছিল
। তার দাড়ি মুন্ডানো ছিল ও মোচ লম্বা ছিল
। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এটা কী ?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম
।’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কিন্তু
আমাদের দ্বীনের বিধান, আমরা মোচ কাটব ও দাড়ি লম্বা রাখব
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১৬-১১৭, হাদীস: ২৬০১৩
দাড়ি কি পরিমান রাখতে হবে ?
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.যখন হজ্জ্ব বা উমরা আদায় করতে, তখন স্বীয় দাঁড়ি মুষ্টি করে ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন
। (বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫;
প্রাগুক্ত হাদীস: ২৫৯৯৭)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) স্বীয় দাঁড়ি ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন
। (মুসান্নাফ লি-ইবনি আবি শাইবা- ১৩/১১২;
হাদীস: ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯ )
হাসান বসরী রাহ. বলেন, তাঁরা (সাহাবা-তাবেয়ীগণ) মুষ্ঠির অতিরিক্ত দাড়ি কাটার অবকাশ দিতেন
।-প্রাগুক্ত ১৩/১১২, হাদীস: ২৫৯৯৫
সুতরাং কেউ
সাহাবিগণকে অনুসরণ করেন সেটা উত্তম ।
ইসলামের দাড়ির বিধান আমরা কজন
পরিপূর্ণ ভাবে মেনে চলি । আমরা প্রত্যেকে নিজের দিকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে
দেখি । তাকয়ে দেখি আমাদের
দেশের ইসলামিক চিন্তাবিদ, ইসলামিক রাজনৈতিক দল, সংসদ সদস্য, স্কুল, কলেজ, বিশ্ব বিদ্যালয়, কোর্ট,
হাজী সাহেব, মসজিদ কমিটি ইত্যাদির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দিকে
।
আমরা নিজেরা মেনে চলি না এমনকি অধিনস্থকেও বাধ্য করি না বরং
কেউ মানতে চাইলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করি-
কোন ছেলে দাড়ি রাখতে চাইলে অভিবাবকগণ বলে- এ বয়সে দাড়ি রেখ
না । তোমার সহপাঠী, সহকর্মীদের অধিকাংশের দাড়ি নেই । বিয়ের আগে এখন দাড়ি রাখলে
সুন্দরী কোন মেয়েকে স্ত্রী হিসাবে পাবে না ! রাখলে বিয়ের পরে রেখ ।
বিয়ের পরে ধনবান সুন্দরী স্ত্রী বলে আমার আত্মীয় স্বজন
বন্ধুবান্ধব কারো মুখে দাড়ি নেই । এখন তুমি দাড়ি রাখলে তোমাকে নিয়ে সমাজে চলতে
আমার লজ্জা করবে ! রাখলে সন্তান হওয়ার পরে তাদের বিয়ে সাধির পরে রেখ ! ইত্যাদি
নানা যুক্তি
অথচ
“প্রত্যেক
নবজাত শিশু ফিতরাত তথা ইসলাম বা স্রষ্টাকে চেনার ও তাকে মেনে চলার যোগ্যতার উপরই
ভূমিষ্ট হয়, কিন্তু তার পিতা মাতা (বা ইসলাম বিরোধী পরিবেশ) তাকে ইহুদী, খৃষ্টান ও
অগ্নিপূজকে পরিণত করে” (আল-হাদীস)
আল্লাহ বলেন-
“আর
আল্লাহ ও তার রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্যে নিজদের
ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে
অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে” (সূরা আহযাব: আয়াত ৩৬)
যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহাব্বত করল সে যেন আমাকেই মুহাব্বত করল
। আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে বসবাস করবে
(তিরমিযী শরীফ, মেশকাত- পৃ: ৩০)
তিনি বলেছেন, "যে আমার সুন্নাহর বিরাগভাজন হয় সে আমার দলভুক্ত নয়" । (মুসলিম, ৩২৩৬; বুখারী, আহমদ, নাসায়ী)
আর যে রসুলের (সাঃ) এর আদেশ মানলোনা সে আল্লাহর আদেশেরই অবাধ্য হল
(সহিহ বুখারি ২৯৫৭, ৭১৩৭; সহিহ মুসলিম ১৮৩৫)
আবার
দেখুন দাড়িযুক্ত মানুষকে
তাদের পরিচিত দাড়িমুক্ত লোক মস্করা করে বিভিন্ন জংগী নামে ডাকে । কারন তাদের মনে
আল্লাহ রাসুলের মহব্বত নাই ।
আল্লাহ
বলেন-কেউ যেন অপর কাউকে অপহাস না করে (হুজুরাত আয়াত ১১)
কিন্তু দাড়িযুক্ত ব্যক্তি কখনও পরস্পরকে এ রকম ঠাট্টা
মস্করা করে না ।
বাহ্যিক ছুরুত শরীয়া অনুযায়ী হলে কি লাভ-
১। পরিচিত অপরিচিত অনেক লোকের সাথে সালাম বিনিময় হবে ।
ক্লিন করা লোককে শুধু পরিচিত লোকই সালাম দিয়ে থাকে ।
২। আযান হলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বা জনসম্মুখে টিভি দেখতে
লজ্জাবোধ করবে । জামায়াতে শরীক হবে ।
৩। নারীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে সংকোচ বোধ করবে । দুষ্ট
প্রকৃতির নারী যতই ধনবান সুন্দরি হোক না কেন আকৃষ্ট কম হবে ।
৪। সকল প্রকার অন্যায় কাজ করতে দ্বিধাবোধ করবে । কোন অন্যায়
জনসম্মুখে প্রকাশ পেলে বেশি করে অপমানিত হবে যার কারনে প্রকাশ্য গুনাহ করা থেকে
বিরত থাকার চেষ্টা করবে ।
শরী’আতের
হুকুমের গোপন রহস্য ও হিকমাত পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না । সুতরাং শরী’আতের কোন হুকুমের রহস্য ও হিকমাত কারো
বুঝে আসুক বা না আসুক তা যে মহান আল্লাহর হুকুম এজন্য বিনা দ্বিধায় অবশ্যই পালন
করতে হবে ।
অতএব আমাদের বাহ্যিক ছুরুত (পুরুষের টাকনুর উপর কাপর এবং
মুখে এক মুষ্টি দাড়ি আর নাড়িদের সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা) যাদের শরীয়ত অনুযায়ী নাই
যারা প্রকাশ্যে গুনাহ (নামায, রোজা, যাকাত, দান সদকা না করা, হারম খাদ্য ভক্ষণ,
সুদ ঘুষের লেনদেন ইত্যাদি) করে তাদেরকে আমরা প্রকৃত মুসলমান বলতে পারি না হয়তো
তারা জন্মগত নামে মুসলিম হতে পারে ।
পবিত্র
কুরআনে আল্লাহ বলেন- হে যারা ঈমান এনেছ
পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর (বাক্বারা, আয়াত ২০৮)
আর
তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না
(ইমরান, আয়াত ১০২)
প্রকৃত মুমিনতো তারাই যারা
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনে
(হুজরাত, আয়াত ১)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন