মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৩

বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে


বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে

সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে আমাদেরকে ইসলাম দান করেছেন, যে দ্বীনে মানুষের পক্ষ থেকে কোন সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হয় না ৷ সালাত ও সালাম তাঁরই রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি, যিনি আল্লাহর দ্বীনের রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করেছেন, কোথাও কোন কার্পণ্য করেননি ৷ দ্বীন হিসাবে যা কিছু এসেছে তিনি তা উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন ও নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে গেছেন তার সাহাবায়ে কিরামের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষিত হোক, যারা ছিলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর আদর্শ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ পালনে সকলের চেয়ে অগ্রগামী ৷   



পৃথিবীতে দিন বলতে (রাত্র+দিবা অথবা রাত্র+রাত্র) সময় ২৪ ঘন্টাকে বুঝানো হয় ।

কোন জনগোষ্ঠীর দিন শুরু হয় রাত্র ১২ টা হতে পরবর্তী রাত্র ১২ টা পর্যন্ত । তাদের মাস ফেব্রুয়ারী ব্যতিত সকল মাস ৩০ বা ৩১ দিনে, ১২ মাসে এক বছর এবং বছর ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনে হয় ।

বিশ্বের সকল মুসলিম উম্মার দিন শুরু হয় সূর্যাস্ত হতে পরবর্তী সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত । মাস ২৯ বা ৩০ দিনে, ১২ মাসে এক বছর এবং বছরের দিন নির্দিষ্ট নয় (কারন চাঁদের উদয়ের উপর নির্ভরশীল)

সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয় । সমগ্র বিশ্বে (সকল ধর্মে) সময় নির্ধারিত হয় সূর্যের সাথে সম্পর্ক করে । তাই পৃথিবীর পূর্ব হতে ক্রমান্বয়ে পশ্চিম দিকে সূর্যদ্বয় এবং সূর্যাস্তের সময়ের পার্থক্য দেখা যায় সর্বোচ্চ ১২ ঘন্টা ।

অতএব মুসলিমদের জন্য কোন দেশে রাত্র (দিন শুরু) আবার কোন দেশে দিবা (দিনের অর্ধাংশ) অর্থাৎ একই দিন ।

পাঁচ ওয়াক্ত নামায

নামাজের সময় পৃথিবী-সূর্যের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের পার্থক্যের সাথে সম্পৃক্ত । আল্লাহ তায়ালা বলেন: 
‘নিশ্চয় নামাজ মুসলিমদের উপর ফরজ নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে’ (সুরা-আন-নিসা: ১০৩)  

আপনার পালন কর্তার সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করুন সূর্যদ্বয়ের পূর্বে সূর্যাস্তের পূর্বে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করুন রাত্রির কিছু অংশ ও দিবা ভাগে (ত্বোয়া হাঃ আয়াত ১৩০)

অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্বরণ কর সন্ধ্যায় ও সকালে এবং অপরাহ্নে ও মধ্যাহ্নে (আর রুমঃ আয়াত ১৭, ১৮)

আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে এবং রাতে ও প্রান্ত ভাগে (হুদঃ আয়াত ১১৪)

সূর্য্য ঢলে পরার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন (বণী ইসরাঈলঃ আয়াত ৭৮)

ফজরঃ-(সূর্য দ্বয়ের পূর্বে-ত্বোয়া-হা/১৩০; প্রান্ত ভাগে-হুদ/১১৪) সূর্যদ্বয়ের আগ পর্যন্ত । রাসুল (সঃ) ফজরের নামায এমন গালছে পড়তেন যে, নামায শেষে মুসল্লিরা একে অপরকে চিনতে পারতেন না (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৬০ পৃঃ)

যোহরঃ-(মধ্যাহ্নে-রুম/১৭, ১৮; দিবা ভাগে-ত্বোয়া হা/১৩০) সূর্য মাথার উপর হেলে যাওয়ার পর হতে কোন কাঠি বা মানুষের ছায়া তার সমান দীর্ঘ না হওয়া পর্যন্ত (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, মেশকাত হাঃ নং ৫৮১)

আছরঃ-(অপরাহ্নে-রুম/১৭, ১৮) বস্তুর মুল ছায়া একগুন হওয়ার পর থেকে হলুদ রং হওয়া পর্যন্ত বাকি থাকে (মুসলিম, মেশকাত, হাঃ নং ৫৩৪)

মাগরীবঃ-(সূর্যাস্তের পূর্বে-ত্বোয়া হা/১৩০; সুর্য্য ঢলে পরার সময় থেকে… ইসরাঈল/৭৮) সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিম আকাশে লাল আভা দূর না হওয়া পর্যন্ত থাকে (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৫০ পৃঃ)

এশাঃ-(রাত্রির কিছু অংশ-ত্বোয়া হা/১৩০; রাতে-হুদ/১১৪) মাগরীবের পর হতে অর্ধ রাত্র পর্যন্ত (মুসলিম, মেশকাত ৫৯ পৃঃ)

জুমআঃ-প্রতি শুক্রবার যোহর নামাজের ওয়াক্তে । সাহাবী সাহল বিন সাআদ (রাযিঃ) বলেন, আমরা জুমুআর নামাজের আগে দুপুরের বিশ্রামও করতাম না এবং দুপুরের খাবারও খেতাম না বরং পরে করতাম (বুখারী মুসলিম, মেশকাত আলবানী ১/৪৪১ পৃঃ)

উপরের আল্লাহর বাণী এবং হাদিসের আলোকে দেখা যায় আমরা বিশ্বের সকল মুসলিমরা একই দিনে সূর্যের সাথে সম্পর্ক করে (শরিয়া অনুযায়ী) ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নামায আদায় করি ।   

এছাড়া কিছু কিছু এলাকাতে (মেরু এলাকাতে) ৬ মাস দিন এবং ৬ মাস রাত হয় । নরওয়েতে কখনই রাত বা সন্ধ্যা হয়না এবং ইউরোপের কয়েয়কটি দেশে কখনও কখনও দিন ২৩ ঘন্টা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে।
তাদের বলা হয়েছে-

পার্শ্ববর্তী দেশের সময়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দিনের বেলায় সেহেরি খাবে, দিনের বেলায় ইফতার করবে । আবার যখন ৬ মাস রাত্রি তখন রাতে সেহেরি খাবে আবার রাতেই ইফতার করবেনামাজ আদায়ের জন্যও একই নির্দেশ (বুখারি)  

যাকাত

পবিত্র কুরআন বলে-তোমাদের বন্ধুতো একমাত্র আল্লাহ তাঁর রাসুল এবং মুমিন বান্দা যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র (সুরা মায়েদার আয়াত ৫৫)

যাকাতের কোন সমষ্টিগত নির্ধারিত কোন সময় দিন নেই । এটা যার যার ব্যক্তিগত সময় দিন সম্পদের উপর নির্ধারিত । যে দিন হতে কোন ব্যক্তি নিসাব পরিমান (৫২.৫০ তোলা খাঁটি রুপা বা ৭.৫০ তোলা খাঁটি সোনা বা রুপা/সোনার যে কোন একটির নিসাব পরিমান নগদ টাকা ইত্যাদি)সম্পদের মালিক হবে তার পরবর্তী এক বছরের মধ্যে শতকরা২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে (বুখারী হাদিস নং ১৩৮৮) ।

এটা এক এক জনের বছরের যে কোন দিন হতে পারে ।                     

চাঁদের উদয়ের উপর নির্ভরশীল ইবাদত

রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ । আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী । কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে । আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে । আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুণ আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর- আল বাকারা আয়াত ১৮৫

পৃথিবীর সকল জীবিত লোকই এ মাস পাবে । তথাপী উক্ত আয়াতে “যে লোক এ মাসটি পাবে” কেন বলা হল ?

এর ব্যাখ্যায় যারা চাঁদের উদয়স্থলের বিভিন্নতা গ্রহন করে নিজ নিজ দেশে চাঁদ দেখে রোজা রাখতে হবে তারা বলে যে দেশে চাঁদ দেখা গেল তারা এ মাস পেল । যে দেশে চাঁদ দেখা গেল না তারা এ মাস পেল না । তাদের দেশে চাঁদ দেখার পরে পাবে ।

আয়াতে অসুস্থ, মুসাফির ব্যক্তির কথাও আছে । অর্থাৎ দেশের সকলে মাস পেয়ে রোজা রাখলেও অসুস্থ, মুসাফির অন্য মাসে সুস্থ, মুক্বীম অবস্থায় রোজা রাখতে পারবে । অর্থাৎ
সামগ্রীকভাবে বলা যারা এ মাসে রোজা রাখতে পারবে তারা এ মাস পেল আর যারা রোজা রাখতে পারল না তারা এ মাস পেল না [অসুস্থ, মুসাফির, নামে মুসলমান (ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজা রাখেনা) ও ভিন্ন ধর্মাবলী অন্যান্যরা]

ইসলামে মাসের শুরুর তারিখ নির্ধারিত হয় নতুন চাঁদের উদয়ের উপর নির্ভর করে । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে । বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য (মাসের) সময় (তারিখ) নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় (তারিখ) ঠিক করার মাধ্যম (সূরাহ আল বাকারাহ- ১৮৯)

চাঁদ দেখা

*রসূল সা: বলেন, তোমরা রোজা রাখবে না, যে পর্যন্ত না চাঁদ দেখতে পাও  একইভাবে তোমরা রোজা ভঙ্গ (ঈদ) করবে না, যে পর্যন্ত না শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পাও । তবে যদি মেঘের কারনে তা তোমাদের কাছে গোপন থাকে, তবে শাবান মাস পূর্ণ করবে ত্রিশ দিনে  অপর বর্ণনায় আছে, তিঁনি (সাঃ) বলেন- মাস কখনও উনত্রিশ দিনেও হয় (সূত্র: সহীহ বুখারী-৩য় খন্ড, ১৭৮৫-১৭৯০, সহীহ মুসলিম-৩য় খন্ড, ২৩৬৭-২৩৯৪)

মুহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেছেন, “ঐ রোযা আরম্ভ হবে যেদিন সকলে রোযা রাখবে, রোযা ভাঙ্গতে হবে ঐ দিন যেদিন সবাই রোযা ভাঙ্গে আর কুরবানী করতে হবে ঐ দিন যে দিন সকলে কুরবানী করে” (তিরমিযী, হাদিস নং ৬৯৭)

উপরের হাদিসে কি বুঝা যায়ঃ-

১) রমযানের সঠিক তারিখ জানার পূর্বে শা’বান মাসের চাঁদ দেখে সঠিকভাবে শা’বানের শুরু তারিখ নির্ধারণ করা । অথচ রমযানের চাঁদ দেখার উপর বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয় ।শা’বানের (যে কোন মাসের) ২৯ তারিখের দিবাগত রাত্রে চাঁদ দেখা না গেলে মাস ৩০ দিনে শেষ হবে এবং ৩০ তারিখের দিবাগত রাত্র থেকে (পরবর্তী মাস) রমযান মাসের শুরু হবে (চাঁদ না দেখা গেলেও)

অতএব রমযানের চেয়ে শা’বানের চাঁদ দেখার গুরুত্ব বেশী (আরবী সকল মাসের চাঁদ দেখার গুরুত্ব আছে)

আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুহাম্মদ (সাঃ) শাবানের মাসের দিন গণনার ক্ষেত্রে অতিশয় সাবধানতা অবলম্বন করতেন এবং তিনি যখনই নতুন চাঁদ দেখতে পেতেন তখন রোযা শুরু করতেন । আর যদি নতুন চাঁদ না দেখতে পেতেন তাহলে শাবান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করে রোযা রাখতেন” (আবু দাউদ হাদিস নং ২৩১৮)

২) “তোমরা, না চাঁদ দেখতে পাও” কথা দ্বারা বুঝা যায় পৃথিবীর সকল মানুষ যারা স্বচক্ষে চাঁদ না দেখবে রোজা রাখবে না, ঈদ করবে না; যারা দেখবে রোজা রাখবে, ঈদ করবে (এমন নয়) । আর কেউই চাঁদ না দেখলে ৩০ শে শা’বানের দিবাগত রাত্র থেকে রোজা রাখবে । রাসুল (সাঃ) এর সমাধান করে গেছেন নিম্নের হাদিস দ্বারা   

এক জন মুসলমানের স্বাক্ষীর উপর রোযা শুরু করা যেতে পারে ।

হযরত ইবনে উমর (রাজিঃ) বলেন, লোকেরা চাঁদ দেখেছে আমি নবী করীম (সাঃ) কে বললাম, আমিও চাঁদ দেখেছি, তখন নবী (সাঃ) নিজেও রোযা রাখলেন এবং লোকজনকেও রোযা রাখার আদেশ দিলেন-সহিহু সুনানি আবিদাউদ ২/৫৫ হাদিস নং ২৩৪২; আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৫, দারেমী 

*একবার সাহাবীগণ রমজানের চাঁদ দেখা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন । তারা তারাবিহ নামাজ না পড়ার এবং পরদিন রোজা না রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন । এমতাবস্থায় ‘হাররা’ নামক এক স্থান থেকে জনৈক বেদুইন এসে সাক্ষ্য দেয় যে, সে চাঁদ দেখেছে  তখন তাকে রসূল সা: এর দরবারে নিয়ে আসা হয় । রসূল সা: তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল ? সে বলে, হ্যা আমি সাক্ষ্য দেই এবং আরও সাক্ষ্য দেই যে, আমি নতুন চাঁদ দেখেছি । অত:পর রসূল সা: হযরত বেলাল রা: কে নির্দেশ দিলেন, লোকদেরকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যে যাতে তারা তারাবিহ নামাজ পড়ে এবং পরদিন রোজা রাখে (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩, ২৩৩৪, তিরমিযী,নাসাঈ, ইবনে মাজাহ,দারেমী)

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে এমন এক ব্যক্তির চাঁদ দেখাই যথেষ্ট, যার দ্বীনদার হওয়া প্রমাণিত অথবা বাহ্যিকভাবে দ্বীনদার হিসেবে পরিচিত (সুনানে আবু দাউদ হাঃ/২৩৪০)

দুই জন মুসলমানের স্বাক্ষীর উপর রোজা শেষ করা যেতে পারে ।

*রসূল সা: আমাদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন যে, আমরা যেন শাওয়ালের চাঁদ দেখাকে ইবাদত হিসেবে গুরুত্ব দেই  আর আমরা স্বচক্ষে যদি তা না দেখি তবে দুজন ন্যায় পরায়ন লোক এ ব্যাপারে স্বাক্ষ্য প্রদান করলে তখন আমরা যেন তাদের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করি (সূত্র: আবু দাউদ-৩য় খন্ড/২৩৩১, ২৩৩২)

হযরত আবু উমাইর ইবনে আনাস (রাঃ) আপন এক আনসারী চাচা থেকে বর্ণনা করেন তারা বলেছেন মেঘের কারনে আমরা শাওয়ালের চাঁদ দেখিনি বলে রোযা রেখেছিলাম । পরে দিনের শেষ ভাগে একটি কাফেলা আসল । তারা নবী করিম (সঃ) এর কাছে রাত্রে চাঁদ দেখেছে বলে সাক্ষী দিল । হুজুর (সঃ) লোকজনকে সে দিনের রোযা ভেঙ্গে দেয়ার আদেশ দিলেন এবং তার পরের দিন সকলে ঈদের নামাযে আসতে বললেন (আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, সহীহু সুনানি আবি দাউদ ১/৬৮৪ হাঃ ১১৫৭)

*একবার লোকেরা রমজানের শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখা নিয়ে মতভেদ করেন  তখন দুজন বেদুইন রসূল সা: এর কাছে হাজির হয়ে আল্লাহর কসম করে সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, গত সন্ধ্যায় তারা শাওয়ালের চাঁদ দেখেছে । তখন রসূল সা: লোকদেরকে রোজা ভাঙ্গার নির্দেশ দেন। রাবী খালফ তার হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, রসূল সা: আরও বলেন যে, লোকেরা যেন আগামীকাল ঈদগাহে আসে” (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩, ২৩৩৪)

সুতরাং অধিকাংশ আলেম বলেন যে রোযা রাখার জন্য একজন দর্শক হলেই চলবে তবে রোযা ভঙ্গ করার জন্য দুইজন দর্শক প্রয়োজন ।

চাঁদ দেখার স্বাক্ষী নিজ দেশের লোক, পার্শ্ববতী দেশের লোক, পৃথিবীর যে কোন দেশের লোক কোথাকার হবে অর্থাৎ “তোমরা” “সবাই” “সকলে” বলতে কাদের বুঝিয়েছেন ?

দেশ অনুযায়ী হিজরী সন গণণা পদ্ধতির ভিন্নতা রয়েছে । যেমন:

* দেশের রাজনৈতিক সীমার মধ্যস্হ স্হলভাগে খালি চোখে নতুন চাঁদ দেখার খবর প্রচার করে দেশে হিজরী সনের মাস শুরু করা । যেমন: বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ওমান, মরক্কো এবং ত্রিনিদাদ-টোবাগো ।

* সৌদি আরবের ঘোষনা অনুসরন করা । যেমন: কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ।

* পাশবর্তী দেশ হতে মাস শুরু করার খবর সংগ্রহ করা । যেমন: নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া হতে, মালদ্বীপ শ্রীলন্কা হতে খবর সংগ্রহ করে রোজা ও ঈদ করে ।

* বিশ্বে প্রথম মাস শুরুর ঘোষক দেশের অনুসরন করা । যেমন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেশগুলো, জ্যামাইকা, বার্বাডোস

* নিজস্ব ভুখন্ডে ফজরের আগে চাঁদের জন্ম বিবেচনা করে মাস শুরু করা । যেমন: লিবিয়া

* চাঁদের বয়স ৮ ঘন্টা, উচ্চতা ২ ডিগ্রী, কৌনিক ব্যবধান ৩ ডিগ্রী এর বেশী হলে মাস শুরু করা । যেমন: মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর

* আগেই পাটীগণিতের সুত্র দিয়ে অগ্রীম পন্জিকা বানানো । যেমন: ইসমাইলিয়া ও কাদিয়ানী । মুলত এরা অমুসলিম জাতি

* আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে পরিচিত দুরর্বতী দেশকে অনুসরন । যেমন: মালয়েশিয়াকে জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়া, পালাউ অনুসরন করে

* বিশ্বের কোথাও সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ দেখার বা তার সম্ভাবনাকে বিবেচনা করা । যেমন: লেবানন

* ৪৮০ মাইল দূরত্বকে নতুন চাঁদ দেখার ভিন্ন উদয় অঞ্চল বিবেচনা করে খালি চোখে নতুন চাঁদ দেখে একই দেশে দুই দিন মাস শুরু করা । যেমন: ভারতের পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, মনিপুর, গুজরাট সহ বিভিন্ন প্রদেশ

* বিশ্বের কোথাও সর্বপ্রথম চাঁদের জন্ম এবং মক্কার সূর্যাস্তের পর চাঁদের অস্ত যাওয়ার মাধ্যমে মাস শুরু করার ঘোষনা করা । এ পদ্ধতিতে বিশ্বের কোথাও না কোথাও নতুন চাঁদ দেখার সম্ভাবনাকে বিবেচনা করা হয় তা খালি চোখেই হোক বা শক্তিশালী দুরবীন দিয়েই হোক । যেমন: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামী আইনবিদ পরিষদ এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফাতওয়া এন্ড রিচার্সের নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকা ও দেশসমূহ ।

এধরনের ভিন্ন ভিন্ন মানদ্বন্দের ভিত্তিতে মাস শুরুর করায় মুসলিম বিশ্বে বিচ্ছিন্নতা এবং ধর্মীয় উৎসবগুলো সার্বজনীনতা ও ধর্মীয় তাৎপর্য হারাচ্ছে ।

* রাসুল (সাঃ) এর মক্কা থেকে মদিনায় হিযরতের দিন ১ হিজরী সাল ধরে ১ তারিখ নির্ধারণ করে ১২ মাসে বছর এভাবে হিজরী সাল গণনা হয় । বিভিন্ন মানদ্বন্দে চাঁদ দেখা বা স্বাক্ষীর জন্য হিজরী সাল তারিখের গড়মিল হয়েছে

* কুরআন নাযিল হয়েছে লাইতুল ক্বদরে (বাকারা-১৮৫; ক্বদর-১) ।
হযরত আয়েশা (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রমযানের শেষ দশ তারিখের বেজড় রাতসমুহে লাইলাতুল কদরকে তালাশ কর-সহিহ আল বুখারী ২/২৮৪ হাদিস নং ১৮৭৪
কোন দেশের ক্বদরের তারিখে কুআন নাযিল হয়েছে !!

* ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম-হযরত আবু উবাইদা (রাজিঃ) বলেন, আমি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাজিঃ) এর সাথে ঈদের নামাজ আদায় করেছি । তিনি বলছেন, এ দুই দিনের রোযা রাখা থেকে নবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন । প্রথম দিন হলো, যখন তোমরা রোযা শেষ কর, আর দ্বিতীয় দিন হলো, যখন তোমরা কোরবানীর গোস্ত খাবে-সহিহ আল বুখারী ২/২৭২ হাদিস নং ১৮৫১

*আবু সাঈদ খুদরী রা: থেকে বর্নীত, রাসুল (সাঃ) রোযার ঈদের দিন এবং কুরবানীর ঈদের দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন (সূত্র: সহীহ সহীহ বুখারী ৩য় খন্ড/১৮৬৭, ১৮৬৮ ও সহীহ মুসলিম ৩য় খন্ড/২৫৩৭-২৫৪২)
এক দেশে ঈদ অন্য দেশে রোজা রাখে !! কে হারাম কাজ করে ?!!

* আরাফা (জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখ) ও আশুরার (দশই মুহাররাম) তারিখের ফযিলত- হযরত আবু কাতাদাহ (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আরাফার রোযা আগের পরের দু’বৎসরের গুনাহ মাফ করে দেয় এবং আশুরার রোযা বিগত এক বৎসরের গুনাহ সমুহ ক্ষমা করে দেয়-আহমাদ, আবুদাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসলিম শরীফ ৪/১২৬ হাদিস নং ২৬১৪
আরাফা ও আশুরার তারখ কোন দেশেরটা সঠিক !!

* জিলহজ্বের ১০ তারিখে (সউদীর চাঁদের উপর নির্ভর করে) হাজিগণ কুরবানী করেন ।

* হাদীস অনুযায়ী কিয়ামত হবে ১০ই মুহাররমের শুক্রবার ।
কিয়ামত পৃথিবীতে কয়দিন হবে !!

উপরের বিষয়গুলোর তারিখ যা চাঁদের উদয়ের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয় । যার যার নিজ দেশের চাঁদ উদয়ের উপর নির্ভর করে উক্ত তারিখ গণনা করলে সমগ্র বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন দিন হয় । আবার কোন দেশে ২৯ বা ৩০ দিনে মাস শেষ অন্য দেশে আর ১ দিন বা ২ দিন পরে মাস শেষ হয় । অর্থাৎ উক্ত দুই দেশে একত্র করলে মাসের দিন হয় ৩০ বা ৩১/৩২ যা শরীয়ায় কোন দলিল পাওয়া যায় না

সর্বজন স্বীকৃত যে উক্ত দিন (তারিখ) পৃথিবীতে একটাই হবে এবং আরবী মাস ২৯ বা ৩০ দিনে ।

অতএব উক্ত দিনের তারিখ সঠিক না হলে গুনাহ্‌গার বা ফযিলত থেকে বঞ্চিত হতে হবে

একথা সকলেরই জানা, শবে ক্বদর, আরাফা, পবিত্র ঈদুল আযহা, আশুরা, ঈদ-ই-মিলাদুন নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম, পবিত্র শব-ই-মিরাজ, শব-ই-বরাত পালনের দিন তারিখ বেশ কিছু দিন পূর্বেই সংবাদ পাওয়া যায় । যা বিশ্বে একই দিনে পালন করা সম্ভব ।

রমযান মাসের ১ম (যে কোন মাসের ১ম) তারিখ নির্ধারন এবং বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানোর উপর নির্ভর করে ১ম রোজা এবং ঈদুল ফিতর (পরবর্তী মাস) ।

প্রত্যেক মাসের ১ম তারিখ নির্ধারনে বিশ্ব মুসলিম উম্মা এক হলেই সকল ইবাদত একই দিনে পালন করা সম্ভব হবে । 

আমরা অনেকে মাযহাবের (ফেকাহ শাস্ত্রের) অনুসরণ করি । ফেকাহ শাস্ত্র খুলে দেখুন তাদের কি মত ছিলঃ-

(১) আলোচিত বিষয়ে বিশ্ব বিখ্যাত ফিকহ গ্রন্থ ফাতওয়া-ই-শামী-এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে-

ভৌগলিক কারণে চন্দ্রমাসের ১ তারিখের চাঁদ কখনই প্রথম দিন সারা পৃথিবী থেকে দেখা যায় না । বরং সমগ্র পৃথিবীতে নুতন চাঁদ দেখা যেতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লেগে যায় । এখন প্রশ্ন হল প্রথম দিন ভূ-পৃষ্ঠের যে সব দেশে নুতন চাঁদ দেখা গেল ঐ সব দেশে চন্দ্র মাসের ১ তারিখ, আবার ২য় দিন যেসব দেশে চাঁদ দেখা গেল সে সব দেশে নুতন করে ২য় ১ তারিখ, আবার ৩য় দিন যেসব দেশে চাঁদ দেখা গেল সেসব দেশে নুতন ৩য় ১ তারিখ গণনা করা হবে ? অর্থাৎ নুতন চাঁদ দেখার বিভিন্নতায় একই চান্দ্রমাসের ভিন্ন ভিন্ন তিনটি ১ তারিখ হবে ? নাকি প্রথম দিনের দেখার ভিত্তিতেই সমগ্র পৃথিবীতে বিশ্ব জনীন (Universal) একটি তারিখ গণনা হবে ? যাকে ফিকহের পরিভাষায়- اختلاف المطالع معتبر ام لا অর্থাৎ চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে কিনা ?

এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে । এ ভাবে যে, প্রত্যেক দেশের মানুষ নিজ নিজ দেখার ভিত্তিতে আমল করবে ? না কি উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হবে না বরং সর্ব প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে সকলের জন্য আমল করা জরুরী হবে ? এমনকি প্রাচ্যে যদি জুমার রাতে চাঁদ দেখা যায় আর পাশ্চাত্যে শনিবার রাতে চাঁদ দেখা যায় তবে পাশ্চাত্যের অধিবাসীদের উপর প্রাচ্যের দেখা অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব ? এ বিষয়ে কেউ কেউ প্রথম মতটি গ্রহণ করেছেন (অর্থাৎ এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশের মানুষের জন্য গ্রহনীয় নয়) । ইমাম যায়লায়ী ও ফয়েজ গ্রন্থের প্রণেতা এ মতটি গ্রহণ করেছেন । শাফেয়ী মাযহাবের মতও এটা । তাদের যুক্তি হল চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশীয় লোক নামাযের ওয়াক্তের মতই নিজ এলাকা বিশেষে সম্বোধিত । যেমন যে অঞ্চলে এশা ও বিতরের ওয়াক্ত হয়না সেখানে এশা ও বিতর নামায আদায় করতে হয়না ।

আর সুপ্রতিষ্ঠিত মত হচ্ছে দ্বিতীয়টি অর্থাৎ চাঁদ দেখার ভিন্নতা গ্রহনীয় নয় । বরং প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সমগ্র পৃথিবীতে এক কেন্দ্রিক তারিখ গণনা করে, একই দিনে একই তারিখে আমল করতে হবে । এটাই আমাদের হানাফী মাযহাবের সিদ্ধান্ত । মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাবের মতও এটা । তাদের দলীল হচ্ছে আয়াত ও হাদীসে চাঁদ দেখার সম্বোধন সকলের জন্য আম বা সার্বজনীন যা নামাজের ওয়াক্তের সম্বোধন থেকে আলাদা-(ফাতওয়া-ই-শামী, খন্ড-২, পৃঃ-১০৫)

(২) বিশ্ব বিখ্যাত ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য কিতাব ফাতওয়া-ই-আলমগীরির সিদ্ধান্ত হলো-

অর্থাৎ ফিকহের প্রতিষ্ঠিত বর্ণনানুযায়ী চাঁদ ঊদয়ের বিভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । ফতুয়াই কাযী খানের ফাতওয়াও অনুরুপ । ফকীহ আবু লাইছও এমনটাই বলেছেন । শামছুল আইম্মা হোলওয়ানী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, যদি পাশ্চাত্যবাসী রমযানের চাঁদ দেখে তবে সে দেখার দ্বারা প্রাচ্য বাসীর জন্য রোযা ওয়াজিব হবে । এমনটাই আছে খোলাছা নামক কিতাবে-(ফাতওয়া-ই- আলমগিরী, খন্ড-১, পৃঃ-১৯৮)

(৩) চার মাযহাবের সমন্বিত ফিকহ গ্রন্থ আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া নামক গ্রন্থের ভাষ্য হচ্ছে-

অর্থাৎ পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা রোযা ফরয হবে ।
চাই চাঁদ নিকটবর্তী দেশে দেখা যাক বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোন পার্থক্য নেই । তবে চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌছতে হবে । তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি,ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরয হয়ে যাবে(আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৪৪৩)

(৪) বিশ্ব মানের ফিকহ গ্রন্থ আল ফিকহুস্‌ সুন্নাহ এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে-

অর্থাৎ জমহুর ফুকাহা গনের সিদ্ধান্ত অতএব যখনই কোন দেশে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে তখনই অন্য সকল দেশে রোযা ফরয হয়ে যাবে । কেননা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন “চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা রোযা ছাড়, ঈদ কর”। এখানে তোমরা বলে সম্বোধন দেশ মহাদেশ নির্বিশেষে সকল উম্মতের জন্য عام ব্যাপক অর্থবোধক । অতএব উম্মতের মধ্য থেকে যে কেউ যে কোন স্থান থেকে চাঁদ দেখুক উক্ত দেখাই সকল উম্মতের জন্য দলীল হবে । এ মত পোষণ করেছেন হযরত ইকরামা, কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ, সালেম এবং ইসহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহিম । হানাফী ফকীহগণের এটাই বিশুদ্ধমত- (আল-ফিকহুস্‌ সুন্নাহ, খন্ড-১, পৃঃ-৩০৭)

(৫) বিশ্ব বিখ্যাত ফিকহ্‌ গ্রন্থ “মুগনী”-এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে-

অর্থাৎ কোন এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখলে সকল দেশের মানুষের জন্যে রোযা রাখা জরুরী হবে । চাই সে দেশ কাছে বা দূরে হোক, আর যে চাঁদ দেখেনি সে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারই মত আমল করবে যে দেখেছে । চাঁদ উদয়ের স্থান ও কাল ভিন্ন হোক (তাতে পার্থক্য নেই)(আল-মুগনী, খন্ড-৪, পৃঃ-১২২)

(৬) বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ “তাবয়ীনুল হাকায়েক”-এর ভাষ্য হচ্ছে-

অর্থাৎ অত্র গ্রন্থের প্রণেতা (রঃ) বলছেন যে, চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । যদিও কেউ চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন । “ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়” এর অর্থ হচ্ছে যদি এক দেশের অধিবাসীরা নুতন চাঁদ দেখেন এবং অন্য দেশের অধিবাসীরা না দেখেন তবে প্রথম দেশবাসীর দেখা দ্বারাই অন্য দেশবাসীদের জন্য রোযা রাখা ফরয হবে । অধিকাংশ মাশাইখ-ই এমত পোষণ করেছেন । এমনকি এক দেশের মানুষ ৩০টি রোযা রাখল, অন্য দেশের মানুষ রোযা রাখল ২৯টি, তাহলে অন্যদেরকে একটি রোযা কাযা করতে হবে ।
(তাবয়ীনুল হাকায়েক, খন্ড-২, পৃঃ-১৬৪/১৬৫)

(৭) বিশ্ব বিখ্যাত ও সর্বজন বিধিত ফিকহ্‌ গ্রন্থ “ফতহুল কাদির”-এর ভাষ্য হচ্ছে-

অর্থাৎ যখন কোন শহরে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে, তখন সকল মানুষের উপর রোযা রাখা ফরয হবে । ফিকহের প্রতিষ্ঠিত মাযহাব অনুযায়ী পাশ্চাত্য বাসীর চাঁদ দেখার দ্বারা প্রাচ্য বাসীর জন্য রোযা রাখা ফরয হবে (ফতহুল কাদির, খন্ড-২, পৃঃ-৩১৮)

(৮) ফিকহের বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ ”বাহরুর রায়েক”-এর ভাষ্য হচ্ছে-

অর্থাৎ চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । অতএব যখন এক দেশের মানুষ চাঁদ  দেখবে, তখন অন্য দেশের মানুষের জন্য রোযা রাখা ফরয হবে, যদিও তারা চাঁদ দেখেনি । যদি তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছে যায় । অতএব পাশ্চাত্যবাসীর দেখার দ্বারা প্রাচ্যবাসীর জন্য রোযা রাখা অত্যাবশ্যক হবে । যদিও কেউ কেউ বলেন উদয় স্থলের বিভিন্নতা গ্রহণযোগ্য । একের দেখা অন্যের জন্য প্রযোজ্য নয় । তবে ফিকহের প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রথমটি । এমনটাই লেখা হয়েছে ফতহুল কাদির গ্রন্থে । সেখানে বলা হয়েছে এটাই প্রকাশ্য মাযহাব এবং এর উপরই ফাতওয়া। খোলাছা নামক কিতাবের ভাষ্যও তাই(বাহরুর রায়েক, খন্ড-২, পৃঃ-৪৭১)

(৯) “ফাতওয়া-ই-কাযীখান”-এর ভাষ্য হচ্ছে-

অর্থাৎ ফিক্‌হের সুপ্রতিষ্ঠিত মতানুসারে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । শামসুল উলামা হোলওয়ানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এমতই উল্লেখ করেছেন (কাযীখান, খন্ড-১, পৃঃ-৯৫)

(১০) বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ “হাশিয়া-ই-তাহতাবী” শরীফের ভাষ্য হচ্ছে-

অর্থাৎ ঈদুল আযহাসহ সকল মাসের চাঁদের হুকুম শাওয়ালের চাঁদের হুকুমের মতোই । কোন উদয় স্থলে চাঁদ দেখা গেলে দুনিয়ার সকল স্থানের মানুষের উপরই আমল জরুরী হবে । যদি চাঁদ উদয়ের সংবাদ পৌঁছে দুইজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে, অথবা কাযীর ফয়সালার উপরে দুইজন সাক্ষ্য দেন, অথবা উদয়ের সংবাদটি ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করে-(হাশিয়া-ই-তাহতাবী শরীফ, পৃঃ-৩৫৯)

(১১) “মায়ারিফুস্‌ সুনান”-এর ভাষ্য হচ্ছে-

অর্থাৎ আমাদের মাযহাবের কিতাব সমূহের উপর ভিত্তি করে আমরা লিখেছি যে, এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে গ্রহণীয় হবে । যদিও দেশ দুটির মধ্যে মাগরিব ও মাশরিকের দূরত্ব হয় । আর এ মাসয়ালা ফকীহ্‌গণের এ নীতিমালার উপর ভিত্তি করে যে চাঁদ উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে না । তবে ফকিহগণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, নামায ও ইফতারের ওয়াক্ত সমূহের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে এবং যার যার স্থানীয় সময় অনুযায়ী নামায পড়বে ও ইফতার করবে- (মায়ারিফুস্‌ সুনান, খন্ড-৫, পৃঃ-৩৩৭)


(১৩) ইমাম জাফর সাদেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

অর্থাৎ রোযা রাখবে না যতক্ষণ না চাঁদ দেখবে, যদি অন্য শহর বা দেশবাসী চাঁদ দেখার সাক্ষী দেয় তাহলে ঐ দিনের রোযা কাযা করবে ।

(১৪) ফাতওয়ায়ে ইবনু তাইমিয়্যা গ্রন্থের ফাতওয়া হচ্ছে-

অর্থাৎ নব চাঁদ উদিত হওয়ার সংবাদ যতটুকু পৌঁছবে ততটুকু তার আওতাভূক্ত হবে । তা কিছুতেই দূরত্বের কারণে কোন দেশ, মহাদেশ বা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে না ।                       (ফাতওয়ায়ে ইবনু তাইমিয়্যা, খন্ড-২৫, পৃঃ-১০৭)

কুরআন, হাদীস ও সম্মানিত ফকিহগণের সম্মিলিত ফাতওয়া সম্পর্কে উপমহাদেশের যুগ বরেণ্য আলেমগণের সিদ্ধান্তঃ-
                                             
(১৫) উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র “দারুল উলুম দেওবন্দ”-এর গ্রান্ড মুফতি আযিযুর রহমান সাহেব ফতোয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ-এ লিখেছেন- 

অর্থাৎ হানাফী মাযহাব মতে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহনীয় নয় । যদি কোন স্থানে শা’বান মাসের ২৯ তারিখে রমযানের চাঁদ দেখা যায় এবং শরয়ীভাবে তা প্রমাণিত হয় তখন ঐ হিসেবেই সকল স্থানে রোযা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে । যে স্থানের লোকেরা সংবাদ পরে পাওয়ার কারণে শা’বান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে রোযা শুরু করেছে তারাও প্রথমদের সঙ্গে ঈদ করবে এবং প্রথমের একটি রোযা কাযা করবে-(ফাতওয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ, খন্ড-৬, পৃঃ-৩৯৮)

(১৬) জামে’ তিরমীযি-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ মায়ারিফুল মাদানিয়্যাহ্‌ গ্রন্থে আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) একই কথা লিখেছেন। যা নিম্নরূপ-

অর্থাৎ আল্লামা শামী (রঃ) লিখেছেন যে, চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতার বিষয়ে কোন মতবিরোধ নেই । কারণ চাঁদ ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে দেখা যাবে এটাই ভৌগোলিক নিয়মমতবিরোধ কেবল এ ব্যাপারে যে, চাঁদ উদয় স্থলের এ ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে কি হবে না ? এ ক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক হানাফী আলেমের মতে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে এবং প্রত্যেক দেশীয় মানুষ নিজ উদয় স্থল অনুযায়ী আমল করবে । এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশের জন্য জরুরী নয় । তাদের এ মত ফিকহের এ মূল নীতির উপর ভিত্তি করে যে, যে জনপদে এশার ওয়াক্ত হয়না অন্য জনপদের ওয়াক্ত অনুযায়ী সেখানে এশা এবং বিত্‌র নামায ওয়াজিব নয় । দ্বিতীয় মত এই যে, চাঁদ উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয় । এটাই ফিকহের প্রতিষ্ঠিত মত । হানাফী, মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাবের নিকট এটাই গ্রহণীয় । তবে যদি দুই দেশের মধ্যে এতটাই দূরত্ব হয় যে যাতে তারিখ একদিন বা দুইদিন বেশী-কম হয়ে যায় তবে এরকম দুই দেশের মধ্যে চাঁদ উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে । কেননা হাদিসে প্রকাশ্য ভাবে বলা হয়েছে মাস ২৯ দিনের কম এবং ৩০ দিনের চেয়ে বেশী হবেনা । অতএব, যে ক্ষেত্রে হাদিসের ভাষ্যের বিরোধী বিষয় জরুরী হয়ে পড়ে তার উপর আমল করা যাবেনা । এই ব্যাখ্যা রোযা ও ঈদের ক্ষেত্রে । বাকী নামায ও অন্য সব এবাদত যেমন সাহ্‌রী ইফতারী-এর ক্ষেত্রে সর্ব সম্মত মতে উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে । এবং প্রত্যেক দেশীয় লোক নিজ নিজ উদয় স্থলের ভিত্তিতে নামায আদায় করবে এবং ইফতার ও সাহ্‌রী গ্রহণ করবে ।
(মায়ারিফুল মাদানিয়্যাহ, খন্ড-৩, পৃঃ-২৩)

(১৭) একই কথা লিখেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও মুফতি আব্দুল কাবী মুলতানী (রহঃ) তার রচিত ছিহাহ ছিত্তা এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মিফতাহুন্‌ নাজ্‌জাহ্‌” কিতাবে । যার ভাষ্য নিম্নরূপ-

অর্থাৎ ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইমাম লাইছ ইবনু সা’দ আল মিশরী, অধিকাংশ ফকিহগণ এবং ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার এক মতে রমযানের রোযার ক্ষেত্রে এই রায় দিয়েছেন যে, যখন কোন এক জনপদে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে তখন দুনিয়ার অন্য সকল জনপদে ঐ দেখা গ্রহণীয় হবে । এমনকি পাশ্চাত্য অধিবাসীগণ চাঁদ দেখলে প্রাচ্যের অধিবাসীদের জন্যে ঐ দেখা দলীল হবে । এ সকল মহামান্য ইমামগণের নিকট রমযানের রোযার ক্ষেত্রে চাঁদ উদয় স্থলের ভিন্নতা মোটেই গ্রহণীয় নয় । বরং সমস্ত পৃথিবী এবং সকল উদয় স্থল এক উদয় স'ল হিসেবে গণ্য হবে । এবং সমগ্র পৃথিবী একটি দেশের মতই গন্য হবে । যেখানেই প্রথম চাঁদ দেখা যাবে উক্ত দেখা শরয়ী পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌঁছলে তার ভিত্তিতে সকলের জন্য আমল করা জরুরী হবে । উক্ত দুই দেশের মধ্যে যতই দূরত্ব হোকনা কেন । এমন কি যদি অষ্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার অধিবাসীগণ চাঁদ দেখেন তাহলে ঐ দেখার দ্বারা পাকিস্তান এবং দূর প্রাচ্যবাসীর উপর রোযা রাখা জরুরী হবে-(মিফতাহুন্‌ নাজ্‌জাহ, খন্ড-১, পৃঃ-৪৩২)

(১৮) একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাচীন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাট হাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদীস আল্লামা হাফেজ আবুল হাসান সাহেব তার রচিত মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ তানযীমুল আশ্‌তাতে। যার ভাষ্য নিম্নে উদৃত হল-

অর্থাৎ চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট গ্রহণীয় নয় । শামী কিতাবে এমনটাই রয়েছে । এটাই আমাদের (হানাফীদের) রায় । মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের মতও এটা । অতএব, কোন স্থানে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সর্বত্রই আমল অত্যাবশ্যকীয় হবে (তানযীমুল আশ্‌তাত, খন্ড-১, পৃঃ-৪১)

(১৯) উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও পীর আল্লামা রশীদ আহমদ গোংগুহী (রহঃ)-এর ভাষ্য নিম্নরূপ- 

অর্থাৎ ফিকহের প্রতিষ্ঠিত মতানুসারে রোযা রাখা ও ঈদ করার ব্যাপারে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । প্রাচ্যবাসীর দেখা দ্বারাই পাশ্চ্যাত্যবাসীর উপর আমল জরুরী হবে- (ফাতওয়া-ই-রশিদিয়া, পৃঃ-৪৩৭)

(২০) উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম, গবেষক ও পীর আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর ভাষ্য নিম্নরূপঃ-

অর্থাৎ এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য সকল শহর বাসীদের জন্য গ্রহণীয় হবে । ঐ শহরগুলোর সঙ্গে চাঁদ দেখা শহরের যত দুরত্বই হোকনা কেন । এমনকি সর্ব পশ্চিমের চাঁদ দেখার সংবাদ সর্ব পূর্বের মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে পৌছলে ঐ দিনই তাদের উপর রোযা রাখা ফরয হবে- (বেহেশসি- জেওর, খন্ড-১১, পৃঃ-৫১০)

(২১) উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, পীর মুফতী আহমদ রেজা খান বেরলভী (রহঃ)-এর ভাষ্য নিম্নরূপঃ-    

অর্থাৎ আমাদের মাযহাবের ইমামগণের বিশুদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধান্ত এই যে, রমযান ও ঈদের ক্ষেত্রে দুই দেশের দুরত্ব কোন ভাবেই গ্রহণীয় নয় । বরং প্রাচ্যের চাঁদ দেখা পাশ্চাত্যের জন্য দলীল হবে । এমনি করে পাশ্চাত্যের চাঁদ দেখা প্রাচ্যের জন্য দলীল হবে । তবে শর্ত হল শরয়ী পদ্ধতিতে সংবাদ পৌছতে হবে- (ফাতওয়া-ই-রাজাবিয়্যাহ্‌, খন্ড-৪,পৃঃ-৫৬৭)

(২২) ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা, উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, ওলীয়ে কামেল, আল্লামা নেছার উদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ভাষ্য হচ্ছে-

মাসয়ালাঃ পশ্চিম দেশে চাঁদ উঠার সংবাদ বা সাক্ষ্য যদি শরীয়ত সম্মত হয়, তবে সেই সংবাদ পূর্বদেশীয় লোকের প্রতি রোযা রাখা ফরজ হইবে (আলমগীরী) (তরিকুল ইসলাম, খন্ড-২, পৃঃ-১৮৮)
  

(২৪) ফাতওয়ায়ে নাঈমিয়ায় মুফতী আহমদ ইয়ার খান (রহঃ) লিখেন-


এভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মের ১৪৪১ বছরের এ সুদীর্ঘ সময়ে যত ফিকহ গ্রন্থ রচিত হয়েছে সকল গ্রন্থেই অত্র মাসয়ালার ক্ষেত্রে একই রকম সিদ্ধান্ত রয়েছে । পাঠকগণের ধৈর্যচ্যুতির আশংকায় উদৃতি উল্লেখ সংক্ষেপ করে শুধু প্রধান প্রধান গ্রন্থগুলোর বর্ননাসূত্র নিম্নে উল্লেখ করা হল-

বাজ্জাজিয়া, খন্ড ৪, পৃঃ ৯৫; তাতারখানিয়া, খন্ড ১ পৃঃ ৩৬৯; নুরুল ইযাহ, পৃঃ ১২৭; আল কাফী, খন্ড ১ পৃঃ ৪৬৮; বজলুল মাযহুদ ফি হল্লি আবি দাউদ, খন্ড ১১ পৃঃ ১০৭; শাইখ তুসী তাহযীব খন্ড ৪ পৃঃ ১৫৫; মিলাযুল আখবার, আল্লামা মাজলেসী খন্ড ১ পৃঃ ৬২০; তাহযীবুল আহকাম, ফয়েজ কাশানী খন্ড ৪ পৃঃ ১৫৭; ছালছাবিল খন্ড ১ পৃঃ ২০২; ইমদাদুল মুফতি পৃঃ ৫৫; ফতহুল মুলহেম খন্ড ৩ পৃঃ ১১৩; আনওয়ারুল মাহমুদ খন্ড ২ পৃঃ ৭১; আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আব্দুল আ’লা সাবযাওয়ারী মুসতানাদ খন্ড ২ পৃঃ ১৩৩; আয়াতুল্লাহ খুয়ী মুসতানাদুল উরওয়া খন্ড ২ পৃঃ ১২২; ফতোয়া-ই-আযীযিয়া খন্ড ৩ পৃঃ ৪৯ (দারুল উলুম দেওবন্দ); তাফসীরে মাজেদা পৃঃ ১০৭; মারাকীহুল ফালাহ পৃঃ ২০৭; মজমুআ ফতোয়া খন্ড ১ পৃঃ ৩৮১; জরুরী মাসায়েল, মাওলানা রুহুল আমীন বর্ধমানী খন্ড ১ পৃঃ ১৪; জামেউর রমুয পৃঃ ১৫৬; নাহরুল ফায়েক মজমুআয়ে ফতোয়া খন্ড ১ পৃঃ ৩৬৯; তাহতাবী পৃঃ ৫৪০; কিতাবুল মাবছুত, আল্লামা ছারাখছী খন্ড ৩ পৃঃ ১৩৯।  

প্রখ্যাত আলেম ওলামাগণ এ সিন্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এক শহরের মানুষ রমযানের চাঁদ দেখলে অন্য শহরের লোকদের জন্যও চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে । এমনকি পৃথিবীর একেবারে পশ্চিম প্রান্তে চাঁদ দেখা গেছে, এই সংবাদ যদি নির্ভরযোগ্য সূত্রে পূর্ব প্রান্তের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে, তবে তাদের উপর এই দিনে রমযানের রোযা ফরয হবে (সূত্র: দুররুল মুখতার, ২য় জিলদ, পৃষ্ঠ-১০৮; আলগিরী, ১ম জিলদ, পৃঃ-১৯৮; বাহরুর রায়েক, ২য় জিলদ, পৃঃ-২০৭; মাজমাউল আনহুর, ১ম জিলদ, পৃঃ- ২৩৯)

ইমাম আবু হানিফা রহ. এর বক্তব্য ও এটাই এবং তিনিই সঠিক ।     

পৃথিবী একটা, চাঁদ একটা, কোরআন একটা, সমস্ত মুসলিম একজাতি, সবাই এক নবীর উম্মাত, তাহলে ঈদ কেন তিন দিনে করব ?
সন্দেহ নিরসনের জন্য বলতে হয় হানাফী মাজহাবসহ তিনটি মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো: নতুন চাঁদ উদয়ের স্থানের বিভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই এবং সর্বপ্রথম হেলালকেই সারা বিশ্বের সকলের অনুসরণ করতে হবে ।

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর অভিমতঃ-

১. যে কোন একটি দেশে নতুন চাঁদের উদয় প্রমানিত হলে বিশ্বের সকল মানুষের উপর তার অনুসরন জরুরী হয়ে পড়ে [উৎস: আল মুখতার ১ম খন্ড ১২৯ পৃঃ / ফতহুল কাদীর (শেরহে ফাতহুল কাদীয়সহ) ১ম খন্ডঃ পৃ ২৪৩/মারাকীন ফালাহ পৃঃ ৫৪০-৫৪১/ আল-বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ২৯০]

২. আর উদয়ের স্থান ও সময়ের বিভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই । (উৎসঃ কাদী খান ১ম খন্ডঃ পৃঃ ১৯৮/ মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড পৃঃ২৩৯ / আল মুখতার ১ম খন্ড পৃঃ ১২৯ আল-ফাতওয়া আল হিন্দিয়াহ ১ম খন্ড, পৃঃ১৯৮/ আল বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ২৯০/ ফাতহুল কাদীর ২য় খন্ড পৃঃ ২৪৩/রদ্দুল মুহতার (শামী) ২য় খন্ড পৃঃ ৩৯৩)

৩. যদি পৃথিবীর পশ্চিমাংশের বাসিন্দারা রমজান মাসের নতুন চাঁদ দেখেন তাহলে তাদের এ দেখাতেই পূর্বাংশের লোকদের উপর (রোজা ও ঈদ) ওয়াজিব হয়ে যাবে (উৎসঃ আল-বাহুরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ২৯০ / মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড ২৩৯ পৃঃ আল হিন্দিয়াহ (ফাতোয়ায়ে আলমগীরী) ২য় খন্ড ১৯৮-১৯৯ পৃঃ। ফাতহুল কাদীর ২য় খন্ড ২৪৩ পৃঃ। বাজাজিয়াহ ৪/৯৫)

সুতরাং হানাফী মাযহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলোঃ পৃথিবীর যে কোন দেশেই নতুন চাঁদ উদয় প্রমানিত হয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে নতুন চাঁদ উদয়ের খবর দূরবর্তী কোন দেশে পৌছে তাহলে সে দেশের মুসলিমদের চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় উৎসবসমূহ পালন করতে হবে । উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ৯০% -এর বেশী মুসলিম হানাফী মাযহাবের অনুসারী ।

ইমাম মালিক (রহঃ) এর অভিমতঃ-

১. যখন বসরা শহরবাসী রমজানের নতুন চাঁদ দেখবে, অতঃপর তা কুফা, মদীনাও ইয়েমেনবাসীদের কাছে পৌছবে তাহলে ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে তাঁর শিষ্যদ্বয় ইবনুল কাসিম ও ইবনে ওয়াহাবের বর্ণনামতে শেষোক্ত দেশবাসীর প্রতিও ওয়াজিব হয়ে যাবে । অথবা যদি বাদ পড়ে তবে সে রোযা কাযা করতে হবে (উৎস আল-মুনতাকা-শরাহল মুয়াত্তা ২য় খন্ড পৃঃ ৩৭)

২. এবং রোযা রাখার নির্দেশ ব্যাপকভাবে সকল দেশকে শামিল করবে । চাই সে দেশ কাছে হোক বা বহুদুরে হোক (উৎসঃ শরহুজ জুরকানী ২য় খন্ড পৃঃ ১৯২/ আশ্-শরহুছ ছগীর ২য় খন্ড পৃঃ ৪/ ফাতহুর রাহীম ১ম খন্ড পৃঃ ১৩০)

সুতরাং মালিকী মাযহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলোঃ নতুন চাঁদ উদয় প্রমানিত হয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে চাঁদ উদয়ের খবর দূরবর্তী কোন দেশে পৌছে তাহলে সে দেশের মুসলিমদের চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় উৎসব সমূহ পালন করতে হবে । উল্লেখ্য, হযরত মালিক (রাঃ) ছিলেন সাহাবী ।

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর অভিমতঃ-

১. কোন একটি দেশের লোকেরা নয়া চাঁদ দেখবে সকল দেশের লোকদের উপর রোযা ফরজ হয়ে পড়ে (উৎসঃ মুঘনী পৃঃ ৭৯/ আররদুন নাদী শরহ কাফীল মরতাদী পৃঃ ১৬১/ জাদুল মুসতাকনে পৃঃ ৭৮ /আস-সালসাবীল ১ম খন্ড পৃঃ২০২ / উমদাতুল ফিকহ- পৃঃ৪৯)

২. চাই সে দেশ কাছে হোক বা দূরে হোক (উৎস: উদমাতুল ফিকহ- পৃঃ ৪৯ / মুযনী পৃঃ ৭৯)

৩. চাই চাঁদ উদয়ের স্থান ও কাল ভিন্নই হোক। (উৎসঃ উমদাতুল ফিকহে পৃঃ ৪৯)

সুতরাং হাম্বলী মাযহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলোঃ নতুন চাঁদ উদয় প্রমানিত হয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে চাঁদ উদয়ের খবর দূরবর্তী কোন দেশে পৌছে তাহলে সে দেশের মুসলিমদের চাঁদের সাথে সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় উৎসব সমুহ পালন করতে হবে ।

শাফেয়ী মাযহাবঃ-যদি চাঁদ কোন এক দেশে দেখা যায় অথচ অন্য দেশে দেখা গেল না, তাহলে দেশ দুটি কাছাকাছি হয় তাহলে উভয় দেশ এক দেশের মতো গন্য হবে

আর দূরবর্তী হয় তাহলে দুটি মত রয়েছে । তার মধ্যে শুদ্ধতর মত হলো এক্ষেত্রে অন্য দেশের লোকদের প্রতি এর হুকুম বর্তাবে না (উৎসঃ রওদাতুত্তালেবীন ২য় খন্ড পৃঃ ৩৪৮/ মাতনুল মিনহাজ মা’মুযনিল মুহতাজ ১ম খন্ড পৃঃ ৪২২। আল-মুহাজ্জাব ১ম খন্ড পৃঃ ১৭৯ শরহমুসলিম (লিন্-নব্বী) ৭ম খন্ড, ১৯৭ পৃঃ। এহইয়াউ উলুমিদ্দীন ১ম খন্ড পৃঃ ২৩২)

সুতরাং পৃথিবীর যে কোন স্থানে যে কোন ভাবে চাঁদ দেখা প্রমানিত হলে সারা বিশ্বে মুসলিমদের উপর ইসলামের বিধি-বিধান পালন করা এবং হিজরী সন গণনা করা সম্পর্কে একমাত্র ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ছাড়া বাকী সব ইমাম ঐক্যমত পোষন করেছেন । কিন্তু পরবর্তীতে শাফেরী মাযহাবের মুজতাহিদরা (গবেষক) এ নিয়ে গবেষণা করে বিভিন্ন ধরনের মত পোষন করেছেন ।

শাফেয়ী মাযহাবে দ্বিমত থাকায় এবং বাকী তিন মাযহাব ঐক্যমত পোষন করায় পৃথিবীর যে কোন স্থানে যে কোন ভাবে চাঁদ দেখা প্রমানিত হলে যারা বিশ্বে মুসলিমদের উপর ইসলামের বিধি-বিধান পালন করা এবং হিজরী সন গণনা করা অবশ্য করণীয় (ওয়াজিব) । 

ফিকাহ শাস্ত্রের উপরোক্ত বর্ণনা যাহেরে রেওয়ায়াতের ফতোয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে । কিন্তু সমস্ত ফুক্বাহায়ে কেরামের ব্যাবহারিক ক্ষেত্র তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়নি    ।

কেন তারা বাস্তবায়ন করেননি বা করতে পারেননি তার কোন ব্যাখা পাওয়া যায় না এবং বর্তমান তাদের অনুসারীরাও সঠিকভাবে জানাতে পারছেনা

অনেকে ধারনা করে বলে

মতভেদ ছিল অর্থাৎ এর বিপরীত মতের দলিলও ছিল অথবা সমগ্র বিশ্বের সাথে দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছানোর জন্য ইত্যাদি

তৎকালীন সময়ে মানুষের বাহন ছিল ঘোড়া, গাধা, উট, পদযুগল ইত্যাদি ।

আল্লাহর রাসুল (সঃ) তাঁর যুগে দূরবর্তী স্থানের লোকদের চাঁদ দেখার সংবাদ পাঠানোর জন্য ‘ঘোড়সওয়ার’ এর ব্যবস্থা করেছিলেন ।

তার পরবর্তী ইসলামি রাস্ট্রের খলিফাগণ চাঁদ দেখে বা স্বাক্ষী পেয়ে যেটি করত, তা হল মুসলমানরা বিভিন্ন পাহাড়ের উপরে মশাল বা আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করতো । যেই এলাকায় প্রথম চাঁদ দেখা যেত, সেই এলাকার পাহাড়ের উপরে মশাল বা আগুন জ্বালানো হতো । সেই আগুন দেখে দূরবর্তি পাহাড়ও আগুন জ্বালানো হতো । এভাবে ধীরে ধীরে সকল এলাকায়, সব মুসলমান আগুন জ্বালানো দেখে চাঁদ দেখার খবর পেত ।

কোন খিলাফাহ এর সময়, যে কোনো অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলে ঘোড়া ছুটিয়ে কিংবা আরও উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম পরবর্তী সময়ের কোনো বিশেষ বাতি জ্বালিয়ে বা শব্দ শুনিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হতো যে নতুন মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে । সে সময়ে সমুদ্রবক্ষে জাহাজের নিরাপদে দিক চিনে চলাচলের সুবিধার্তে যে সকল লাইট হাউস বা বাতিঘর ছিল, আকাশে চাঁদ দেখা গেলে সেগুলিতে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হত । একটি লাইট হাউসে আলো জ্বললে সে খবর যখন অন্যটিতে পৌঁছাত, তখন অন্যটিতেও আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হত । এভাবে জনতা আলো জ্বলতে দেখে চাঁদ দেখার ব্যাপারটি বুঝতে পারত । এ প্রক্রিয়ায় যে সকল এলাকার মানুষ চাঁদ দেখার ব্যাপারটি বুঝতে পারত, সে সকল এলাকার মানুষেরা রোজা, ঈদ একসাথে পালন করত

এখান আমরা একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারব যে, আকাশে চাঁদ দেখা গেছে, এ সংবাদটি পায়ে হেটে অন্যদেরকে জানানো, ঘোড়ায় চড়ে জানানো, লাইট হাউসের মাধ্যমে জানানোর মধ্যে বিষয়ভিত্তিক কোনো পার্থক্য নেই বরং প্রযুক্তিগত পার্থক্য রয়েছে, যা প্রথম যুগ থেকেই গ্রহন করা হয়েছে

বেশী সংখ্যক মানুষকে দ্রুততার সাথে জানানোর জন্যে এ মাধ্যমগুলি প্রযুক্তি বিশেষ, যা সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়েছে । এখানে উক্ত প্রযুক্তির একটিই উদ্দেশ্য ছিল, তা হলো-দ্রুততার সাথে অন্যদেরকে চাঁদ দেখার সংবাদটি জানানো ।

এভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মের ১৪৪১ বৎসরের ইতিহাসে অত্র মাসয়ালার উপরে কুরআন, সুন্নাহ্‌ এবং ফিকহের ইজমা বা ঐক্যমত থাকা সত্বেও তাৎক্ষনিক সংবাদ দেওয়া-নেওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় তারা পারিপার্শিক অবস্থার প্রেক্ষিতে

যতদূর পর্যন্ত সংবাদ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ততদূর এলাকায় আমল করেছেন । তাদের এ আমল সমসাময়িক পরিস্থিতিতে ছহীহ ও যুক্তিপূর্ণ ছিল ।

অপর দিকে বর্তমানে সে ওজর বা সমস্যা না থাকায় এবং তাৎক্ষনিক সংবাদ দেয়া-নেয়ার ব্যবস্থা থাকায়

আমাদেরকে অবশ্যই মূল মাসয়ালা অনুযায়ী আমল করতে হবে । এটাই ফিকহের সিদ্ধান্ত এবং বিবেক ও সময়ের দাবী ।

আল্লাহপাক বলেন-

‘প্রত্যেক সংবাদের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে প্রকাশের জন্য’ (৬:৬৭)

বর্তমান কালে স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ইন্টারনেটের কল্যানে চাঁদকে পৃথিবীর সকল এলাকাবাসীর সামনে সরাসরি উপস্থাপন করা যায় ।

আধুনিক প্রচার মাধ্যম (টিভি, রেডিও, ইন্টারনেট, মোবাইল…) কে আমরা যাতে কাজে লাগাতে পারি তা বহু আগেই আল্লাহপাক নির্ধারণ করে দিয়েছেন ।

আল্লাহপাক বলেন,
‘আমি বাতাসকে দিয়েছি তোমাদের সুসংবাদ বহনের জন্য’ (সূরা আল ফোরআন-৪৮, নমল-৬৩, রুম-৪৭) 

আজকের এই প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সময়ে যদি কেউ এক এলাকাতে চাঁদ দেখতে পায় এবং তা অন্য এলাকার লোকদেরকে টেলিফোনে, ইন্টারনেটে, টেলিভিশনে, রেডিওর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, তাহলে তা পূর্ববর্তী সময়ের পায়ে হাটা, ঘোড়ায় চড়া, লাইট হাউসের মাধ্যমে ঘটিত প্রচারণার সমপর্যায়েরই হবে । কারণ, এখানে উদ্দেশ্য একই ।

বর্তমান সময়ের জ্ঞানীরাও এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন কিভাবে সকল ইবাদত বিশ্ব মুসলিম এক হয়ে পালন করা যায় । অনেকে আধুনিক প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে এ বিষয়ে লেকচার, বইয়ের মাহ্যমে প্রচারনা চালাচ্ছে।

সকলের প্রচারনায় দেখায় যায়-
সউদির চাঁদ দেখার খবরের সাথে মিলিয়ে এক করতে চান ! কেন ?

বলেন- সৌদী আরবের অবস্থান পৃথিবীর মাঝখান বরাবর । বিখ্যাত ‘গোল্ডেন রেশিও’ অনুযায়ী মক্কা পৃথিবীর কেন্দ্র বিন্দু ।

মক্কা ইসলামের কেন্দ্র বিন্ধু । কা’বা মুসলমানদের সর্বোচ্চ সম্মানিত তীর্থস্থান । কা’বা শরীফের ঠিক উপরে বায়তুল মামুর যার নিচ বরাবর আদম আ: কা’বা প্রতিষ্ঠিত করেছেন ।

নবী মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা থেকেই আল্লাহর বাণী সমগ্র বিশ্বে প্রচার শুরু করেছেন ।

মক্কার সাথে পৃথিবীর যে কোন স্থানের সময়ের ব্যবধান বার ঘন্টার নিচে। কোন স্থানের সাথে সময়ের ব্যবধান বার ঘন্টার নিচে থাকলে ঐ স্থান অনুসারে মাস শুরু করা যায় ইত্যাদি ।

তারিখ চাঁদের উদয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত । মাসের প্রথম দিনের চাঁদ পশ্চিম আকাশে উদিত হয় । সৌদির পশ্চিমের দেশগুলতে আগে চাঁদ দেখা যাবে ।

প্রথম চাঁদ যে দেশে দেখা যাবে তাদের সাথে এক হওয়া উচিত নয় কি ? তাছাড়া শরীয়ায় সৌদিকে মনদ্বন্দ করার কোন দলিল আছে কি ?

আল্লামা শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহ.)      

একই দিনে সারাবিশ্বে ঈদের প্রবক্তাদের কেউ কেউ মক্কা শরীফে চাঁদের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ ও সাওম পালনের যে মত ব্যক্ত করেছেন । কিন্তু খোদ সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি আল্লামা শায়খ বিন বায (রহ.) এটি নাকচ করেছেন ।    

তিনি বলেন: ‘বিশেষ করে মক্কার চাঁদ দেখাকে ভিত্তি করে যারা সারা দুনিয়ায় রামাযান ও ঈদের ফায়সালা করতে বলেন, তাদের এ মতের কোন ভিত্তি ও দলীল নেই ।
আর তা হলে অবস্থা এ রূপ হবে যে, মক্কায় চাঁদ দেখা না-হলে, অন্য অঞ্চলের লোকেরা চাঁদ দেখলেও তাদের উপর সাওম ফরজ হবে না’- (আল বা’সুল ইসলামী: জিলহজ্ব ১৩৯৯, সূত্র: ইসলামী মাহ, মওলানা ইয়াক‚ব ঈসমাইল দেওবন্দী, পৃ. ১৩১) 

সুতরাং যারা সৌদি সাথে এক হওয়ার কথা বলেন বিষয়টি ভেবে দেখুন । মুসলিম উম্মার কেন্দ্র মক্কার ইসলামিক চিন্তাবিদেরকে বিষয়টি পর্যালোচনার দাবি রাখে ।

মক্কা ইসলামের কেন্দ্র হিসাবে আমরা
বিশ্বের মুসলিম উম্মা থেকে একজন খলিফা (যে সহিহ শরীয়া জ্ঞানের অধিকারী) মেনে তার কেন্দ্রীয় কার্যালয় সউদিতে করতে পারি ।
তার অধিনিস্থ বিভিন্ন দেশের গভর্ণর (প্রত্যেক দেশে একজন) বানাতে পারেন । বিশ্বের যে দেশে প্রথম চাঁদ দেখা যাবে ঐ দেশের গভর্ণর খলিফাকে জানাবে ।

খলিফা অধুনিক প্রচার যন্ত্রের মাধ্যমে প্রথম চাঁদ দেখার খবর বিশ্ব বাসীর নিকট প্রচার করবে । এভাবে মাসের শুরু সমগ্র বিশ্বে এক সাথে করা যেতে পারে । (ইনশাআল্লাহ) ।

উক্ত খলিফা শির্ক বেদাতেরও সমাধান দিবেন
যারা এতে লিপ্ত তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রমাণ নিয়ে সহিহ শরীয়া মতে জানাবেন এটা করা যায়েজ, এটা নাযায়েজ ।

শুধু চাঁদ দেখার খবর হলে দেশের রাষ্ট্র প্রধানও করতে পারবে ।

মক্কার সাথে পৃথিবীর যে কোন স্থানের সময়ের ব্যবধান বার ঘন্টার নিচে (ধরা যাক ১০ ঘন্টা) ।

মক্কায় যখন সন্ধ্যা তক্ষণাৎ ১ম চাঁদের খবর প্রচার করা হলে অন্য দেশে তখন সুবহে সাদিক হবে । রমযানের তারাবী, সেহেরী, নিয়ত ঐ দেশের লোকেরা কিভাবে করবে ?

তারাবীর জন্য-

রাসুল (সঃ) সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে
মাত্র তিন দিন জামাতের সহীত তারাবীর নামায পড়েছেন
হযরত আবু যর (রাঃ) বলেন আমরা রাসুল (সঃ) এর সাথে রোযা রেখেছি, নবী (সঃ) আমাদের তারাবীর নামায পড়ালেন না, এমনকি রমযানের আর সাত দিন বাকি ছিল অর্থাৎ তেইশ তারিখ পর্যন্ত । তারপর তেইশ তারিখে রাত্রে আমাদের তারাবীর নামায পড়ালেন তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত । চব্বিশ তারিখ পড়ালেন না । পঁচিশ তারিখ রাত্রে অর্ধ রাত পর্যন্ত তারাবী পড়ালেন । আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! কতইনা ভাল হত যদি আপনি আমাদের সারারাত নামায পড়াতেন । নবী (সঃ) বললেন যে ব্যক্তি ইমাম মসজিদ থেকে চলে আসা পর্যন্ত ইমামের সাথে জামাতে নামায পড়েছে সে সারা রাত ইবাদত করার ছওয়াব পাবে । এরপর যখন সাতাশ তারিখ হয়ে গেছে তখন আবার নামায পড়লেন এবার পরিবারবর্গ এবং মহিলাদেরকেও আহবান করলেন এবং সুবহে ছাদেক পর্যন্ত নামায পড়ালেন (তিরমিযী । নাসাঈ । ইবনে মাযাহ । সহীহু সুনানি আবি দাউদ ১/৩৭৯ হাঃ ১৩৭৫)

তারাবীর নামায ছাড়া রোযা রাখা যায় ।
উপরের হাদিসটি কি বলছে ভাল করে বুঝুন, জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিন ?

এছাড়া উক্ত দেশের লোকেরা ব্যক্তিগতভাবে
তাহাজ্জুদ নামায পড়তে পারে যা তারাবীর সমতুল্য ।

কেউ বলে কিয়ামু রমযান হলো- তাহাজ্জুদ । কিয়ামু রমাযান অর্থাৎ তারাবীহ (মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড অনুচ্ছেদ ১০৯ অধ্যায় সালাত পৃঃ ৮৯ ইঃ ফাঃ)

আনোয়ার শাহ কাশমিরি হানাফী (রহঃ) লিখেছেন-
আমার নিকট এ দুটি নামায একই নামায । সাধারণ লোকেরা এটার অর্থ না বুঝে দুটো আলাদা নামায বানিয়ে দিয়েছে (ফয়জুল বারী শরাহ বুখারী ২য় খন্ড ৪২০ পৃঃ)

দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রটিষ্ঠাতা আল্লামা কাসেম নামুতুবী (রঃ) তার কিতাবে লিখেছেন- জ্ঞানীদের নিকট এ কথা গোপন নয় যে,
কেয়ামে রমযান ও কেয়ামুল্লায়ল আসলে এ দুটো একই নামায । যেটা মুসলমানদের সুবিধার জন্য রাতের প্রথম অংশে নির্দিষ্ট করা হয়েছে । কিন্তু গুরুত্ব হচ্ছে শেষ রাত্রে আদায় করা (ফয়েজে কাসেমিয়া ১৩ পৃঃ)

সেহেরী নিয়তের জন্য-

যাদের দেশে চাঁদ দেখা যায় নাই তারা
২৯ শে শা’বান দিবাগত রাত্রে সেহেরী খেয়ে রমযানের নিয়ত করতে পারেন
যদি দিবাভাগে জানতে পারেন বিশ্বে চাঁদ উদয় হয়েছে তাহলে এক সাথে হয়ে গেল ।
আর যদি চাঁদ উদয় হয় নাই জানতে পারেন তাহলে ঐ দিনের রোজা ভেঙ্গে দিবে (যারা নিয়মিত শা’বানের রোজা রাখে না তাদের জন্য)

ঠিক এমনই একটি সন্দেহযুক্ত দিনে একবার প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রাঃ) এর সামনে একটি ভূনা বকরী উপস্থিত হয় এবং তখন তিঁনি (সাঃ) সকলকে বললেন-খাও । কিন্তু জনৈক ব্যক্তি দূরে সরে গিয়ে বলল-আমি রোজাদার । 
আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রাঃ) বললেন-যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত দিনে রোজা রাখে সে আবুল কাসিমের (রসূল সাঃ) সাথে অবাধ্য আচরণ করেছে (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩২৭, তিরমিযী)

নবী করীন (সাঃ) বলেছেন, তোমরা রমজান মাসের একদিন বা দুই দিন আগে থেকে রোযা রেখ না । তবে কারও যদি আগে থেকেই কোনো নির্দিষ্ট দিন রোযা রাখার অভ্যাস থাকে এবং ঘটনাক্রমে সে দিনটি ২৯ ও ৩০ শাবান হয় তাহলে সে ওইদিন রোযা রাখতে পারে (সহিহ বুখারী ১/২৫৬ হাঃ/১৯১৪)

আর যারা একেবারেই অলস অজ্ঞ গুরুত্বহীন চেষ্টা করবেন না ঘুম থেকে জেগে দেখলেন ফজর হয়ে গেছে পরে চাঁদ উদয়ের খবর পেলেন

পূর্বে মনে যদি নিয়ত থাকে সম্ভব হলে এ অবস্থায় সেহারী না খেয়ে রোজা রাখতে পারেন
না রাখলে এক সঙ্গে ঈদ করে পরে একটি রোজা কাযা করে নিতে পারেন

শরীয়া ক্ষেত্রে উদাসীনতার জন্য আল্লাহ’র নিকট খাঁটি তওবা করুন

হযরত আসমা বিনতে আবুবকর (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এর জামানায় একদিন আমরা মেঘের কারনে রোযা ইফতার করেছি, কিন্তু পরে সূর্য দেখা গেছে । [হাদিসের রাবি বলেন] আমি হিশামের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষদের কি কাজার আদেশ দেয়া হয়েছিল ? হিশাম বলল, কাজা ব্যতীত অন্য কোন পন্থাও তো ছিল না ।-ইবনে মাজাহ, সহিহ আল বুখারী ২/২৫৮ হাদিস নং ১৮২০

অনুরুপে বলা যায়, চাঁদ দেখার খবর সুবহে সাদেকের পূর্বে না পেলে এবং বিশেষ কারনে রোজা রাখতে না পারলে ঈদের পরে কাযা করা যাবে ।

সব কিছু এক সাথে করা সম্ভব নয় । যেমন সেহেরী ও ইফতারের সময় এবং নামাযের সময় ।

সময় সূর্যের সাথে শয়ীয়া দ্বারা নির্ধারিত ।
সময় এক না হলেও দিন বা তারিখ (যা চাঁদের সাথে সম্পর্কযুক্ত) এক করা সম্ভব । যা লেখার শুরুতে দেখানো হয়েছে ।

কারো দেশে রাত (দিনের শুরু) কারো দেশে দিবা (দিনের অর্ধাংশ) অর্থাৎ একই দিন এটাই অনেকের বুঝের অভাব ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায় । অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত- আল বাকারা আয়াত ১৮৭)

অতএব সেহরী, ইফতার, নামায সূর্যের সাথে সম্পর্ক করে যার যার স্থানীয় সময়ে পালিত হবে ।

একসময় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একই রাষ্ট্র ছিল । তখন ভারতের আকাশে চাঁদ দেখা গেলেই রোযা ও ঈদ পালন করা হতো । ৪৭ এর পর পাক-ভারত আলাদা হয়ে যায় । তখন থেকে দু’দেশের আকাশও আলাদা হয়ে গেল । ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্দে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয় । তখন থেকে ‘বাংলাদেশের আকাশ’ নামে একটি আকাশেরও জন্ম হয়েছে

মহান আল্লাহ কি এভাবে পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের জন্য পৃথক আকাশ তৈরি করেছেন ? নি:সন্দেহে ‘না’

আমরা যারা পূর্বে না জানার কারনে, দ্রুত প্রচার ব্যবস্থা না থাকার কারনে ভুল করেছি তাদের প্রতি অনুরোধ রইল বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখুন এবং প্রয়োজনে আপনার পরিচিত

শরিয়া জ্ঞানীদের নিকট মৌখিক না জেনে কুরআন ও সহিহ হাদিসের পূর্ণাঙ্গ দলিল চেয়ে লিখিত চান কিভাবে সমাধান করা যায় ?

আল্লাহপাক বলেন- ‘জ্ঞানীরাই চিন্তা-ভাবনা করে’ (সূরা ইব্রাহীম-৫২)   

লেখাটি যারা মনযোগসহ পড়েছেন, বুঝেছেন, ভাল লেগেছে আপনারা কপি করে, প্রিন্ট মিডিয়া বা অন লাইনের যে কোন সাইটে প্রকাশ করতে পারেন অথবা এর লিঙ্কটি অন্যদের নিকট  ব্যপক প্রচার করতে পারেন ।

যারা অন্য ভাষায় পারদর্শী আপনারা হুবহু ঐ ভাষায় রূপান্তর করেও প্রচার, প্রকাশ করতে পারেন ।

কোন ধরণের ভুল পেলে বা কোথাও প্রকাশ করলে আমার মেইল     sottersondhane143@gmail.com এ জানাবেন । সংশোধন করব । ইনশা আল্লাহ !
  
আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ বুঝার তৌফিক দিন ।

**আমীণ**

কিছু তথ্যঃ-

এ বিশৃঙ্খল অবস্হা সম্পর্কে ১৬ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে এক প্রেস রিলিজে ৫৭টি দেশ নিয়ে গঠিত ইসলামী সহযোগিতা সংস্হা (ও.আই.সি) এর মান্যবর মহাসচিব একমেলেদ্দীন ইহসানোগলু বলেন,’’
এ বছর (২০০৬) ঈদুল ফিতর ঈদুল ফিতর উদযাপনে সময়ের পার্থক্য ৩ দিন পৌছেছে । আধুনিক বিজ্ঞান বিশেষত: জ্যোতির্বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতির যুগে এই অবস্হা দু:খজনক ।
ইসলামী উৎসবগুলোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে । এসব উৎসব বিশ্বের সব মুসলিমের হৃদয়ে ঐক্যের বার্তা পৌছে দেয় । এই ঐক্য এসব উৎসবের নির্যাস হিসেবে প্রকাশ পায় । কিন্তু এসব উৎসব বর্তমানে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যের বদলে অনৈক্য ও বিভেদের উপলক্ষ্য হিসেবে উপস্হিত হয়েছে । এতে মুসলিমদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রকাশ পাচ্ছে না । এটি একটি বড় ধরনের ভুল । কারণ এসব ধর্মীয় উৎসব ধর্মের বস্তুনিষ্ঠতা থেকে দূরে সরে যেয়ে একঘেয়েমি ও কুপমন্ডুকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে ।  

এ ব্যাপারে ইসলামী সম্বেলন সংস্হা (ও.আই.সি) ১৯৮০ -র দশক হতে লিখিতভাবে এবিষয় নিয়ে সোচ্চার । ও.আই.সি এবিষয়ের উপর প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং বিভিন্ন সম্বেলনে এবিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছে । মুসলিম দেশগুলোতে একটি একক ক্যালেন্ডার অবলম্বন করার জন্য হিজরী ক্যালেন্ডারকে ধর্মীয় ও বিজ্ঞানের মুলনীতি প্রয়োগ করে পরিমার্জিত করতে হবে
এব্যাপারে ব্যবস্হা নিতে ইসলামী আইনবিদ্যা কেন্দ্রকে অনুরোদ করছি । পরিমার্জিত এ হিজরী ক্যালেন্ডার বিশ্বের সব মুসলিমকে রোজা ও অন্যান্য উৎসবগুলোতে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করবে । এবিষয়ে বিভক্তি ও অনৈক্য দুর করতে মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় ও নেতৃস্হানীয় কর্তাব্যক্তিদের এক সাথে কাজ করতে আহবান জানাচ্ছি । জেদ্দা: ২৮ অক্টোবর ২০০৬ দেখুন: 

বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশ এবং সকল মুসলিমের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্ব মুসলিম সংগঠন ও, আই, সি-এর ফিকহ একাডেমী ১৯৮৬ সনের ১১-১৬ অক্টোবর জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে শতাধিক শরীয়াহ্‌ বিশেষজ্ঞের সর্ব সম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে,

“বিশ্বের কোন এক দেশে চাঁদ দেখা গেলে সকল মুসলিমকে ঐ দেখার ভিত্তিতেই আমল করতে হবে”

বিশ্বব্যাপী ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ হওয়া ও.আই.সি -র সিদ্ধান্ত বিরোধী । আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে । এজন্য জনমত গঠন করতে হবে ।

সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ করার বিষয়ে ও.আই.সি এর বিভিন্ন প্রস্তাব এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে । দেখুন

2. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/12/12%20icfm-cultural-en.htm    (RESOLUTION NO. 8/12-C)   
3. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/13/13%20icfm-cultural-en.htm    (RESOLUTION NO. 11/13-C)  
4. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/14/14%20icfm-cult-en.htm          (RESOLUTION NO. 19/14-C)  
5. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/15/15%20icfm-cult-en.htm           (RESOLUTION NO.17/15-C)
6. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/16/16%20icfm-cult-en.htm           (RESOLUTION NO.13/16-C)
7. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/17/17%20icfm-cult-en.htm           (RESOLUTION NO. 16/17-C)  
8. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/18/18%20icfm-cult-en.htm            (RESOLUTION 18/18-C)  
9. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/19/19%20icfm-cult-en.htm            (RESOLUTION NO. 24/19-C)
10. ISTANBUL, REPUBLIC OF TURKEY            24-28 MUHARRAM 1412H, 4-8 AUGUST 1991  
11.
 http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/21/21-4th%20resolution.htm

আল-কুরআন- তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি কর না (আশ শুরা আয়াত ১৫);

তোমাদের নিকট যে জ্ঞান পৌঁছেছে তারপরও যদি তোমরা তাদের (কুরআন-হাদিস বহির্ভূত কারো কথা) মনের ইচ্ছা ও বাসনার (দলিল বিহীন মতবাদ) অনুসরণ কর তাহলে নিশ্চিত রুপে তোমরা যালিমদের মধ্যে গণ্য হবে (বাক্বারা আয়াত ১৪৫);   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন