সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৩

হাদীস লিপিবদ্ধকরণ কখন থেকে এবং বিভিন্ন ইমামগণের নির্দেশ


 

হাদীসশাস্ত্রের বিশ্বস্ততা ও প্রামাণিকতাকে খর্ব করার জন্য ইদানিং আমাদের সমাজের একদল লোক বলে-

হাদীসশাস্ত্রের যে বিপুল ভান্ডার বরেণ্য মুহাদ্দিসগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমাদের হস্তগত হয়েছে, তার সবগুলোই লিপিবদ্ধ করা হয়েছে রাসুল (সাঃ) এর অন্তরধানের একশত বছর পর ।

সত্যিই কি হাদীস রাসুল (সাঃ) এর অন্তর্ধানের একশত বছর পর লিপিবদ্ধ হয়েছে ?

না হাদীস লিপিবদ্ধ করার চর্চা স্বয়ং রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশাতেই বিদ্যমান ছিল ?

হাদীসশাস্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশাতেই লিপিবদ্ধ হয়েছিল এবং এ সম্বন্ধে এত বেশী প্রমান মওজুদ রয়েছে যে, তা দেখে Sprenger ও Goldziher প্রমুখ পাশ্চাত্যের হাদীসশাস্ত্র বিশারদগণও একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে,

“হাদীস স্বয়ং রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশাতেই লিপিবদ্ধ হয়েছিল” । Goldziher তাঁর Muhammedanische studian নামক গ্রন্থে অকাট্য যুক্তি ও প্রমাণাদির দ্বারা এ দাবী সপ্রমাণিত করেছেন ।

আরবী শব্দ ‘‘কিতাবাতুল হাদীস’’ এর অর্থ হল ‘লিপিবদ্ধ করা’ ও “তদ্‌ভীনুল হাদীস’’ এর অর্থ হল ‘সংকলন করা’ ।

আমরা স্বীকার করি যে, হাদীস সংকলনের কাজ রাসুল (সাঃ) এর যুগে হয়নি বরং তা সাহাবাগণের শেষ যুগে আরম্ভ হয়েছিল ।

কিন্তু হাদীস “সংকলন করা” আর হাদীস “লিপিবদ্ধ করা” দু’টো এক জিনিস নয় । এ দু’টোর মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান ।

হাদীস রাসুল (সাঃ) এর যুগেই লিপিবদ্ধ হয়েছিল । নিম্নে কিছু প্রমান পত্র সুত্র সহ উল্লেখ করা হল-

(ক) হাদীসশাস্ত্রের বর্তমান গ্রন্থরাজি একটু মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করলে এ কথা দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হয় যে,

প্রথিতযশা সাহাবাগণের অধিকাংশের নিকট এক একখানি “সহিফা” (বই) ছিল, যার মধ্যে তারা রাসুল (সাঃ) এর নিকট থেকে শ্রুত হাদীসগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখতেন ।

রাসুল (সাঃ) এর বিশিষ্ট সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আল-আস’ এর নিকট একখানা “সহিফা” ছিল যার মধ্যে তিনি নবী (সাঃ) এর সমস্ত “কওল” “আমল” লিপিবদ্ধ করে রাখতেন ।(বুখারী-কিতাবুল ইল্‌ম; তিরমি্যী-বাবুল ইল্‌ম; মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বল-২য় খন্ড পৃঃ ১৬৪, ২০৭, ২১৫, ২৪৮; তাবাকাত ইবনে সা’আদ ৪র্থ খন্ড ২য় ভাগ পৃঃ ৭)

আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস এর গ্রন্থখানার নাম ছিল “সাদিকা” । বিখ্যাত তাফসীরকার তাবি’ঈ মুজাহিদ এ গ্রন্থখানি ইবনে আমর বিন আস এর নিকট স্বচক্ষে দেখেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন (উসদুল গাবা, তাবাকাত ইবনে সা’আদ ৪র্থ খন্ড ২য় ভাগ পৃঃ ৮)

আব্দুল্লাহ বিন আমরের মৃত্যুর পর এ গ্রন্থখানি উত্তরাধিকার সূত্রে তদীয় পৌত্র ‘আব্দুল্লাহর হস্তগত হয় এবং তিনি তার সদ্ব্যবহার করেন (Gold, muh, stu ২য় খন্ড পৃঃ ৫)

হাদীস বর্ণনায় ক্ষেত্রে সংখ্যার দিক দিয়ে সর্বোচ্চ স্থান লাভ করেছেন আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) । তার মাধ্যমে সর্বাধিক সংখ্যক হাদীস হস্তগত হয়েছে । তার বর্ণিত হাদীসগুলোর সংখ্যা ৫৩৭৪ (মিফতাহুস সুন্নাহ্‌ পৃঃ ২৭)

আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) প্রায়শঃ এ কথা বলতেন যে, যদি আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস হাদীস লিপিবদ্ধ করে না রাখতেন তবে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাদীস বর্ণনাকারীর পদ অধিকার করতে পারতাম (বুখারী-কিতাবুল ইল্‌ম; তিরমি্যী-বাবুল ইল্‌ম;)

(খ) রাসুল (সাঃ) এর শেষ্ঠ সাহাবী এবং ইসলাম জগতের প্রথম খলিফা আবূ বাক্‌র (রাযিঃ) এর নিকট ৫০০ হাদীস সম্বলিত একখানি “সহীফা” ছিল (তাবাকাতুল হুফ্‌ফায ২য় খন্ড পৃঃ ৫)

(গ) আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযিঃ) এর নিকট একাধিক “সহীফা” ছিল । ইবনে আব্দুল বার লিখেছেন যে, আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের নিকট “এক উটের বোঝা” পরিমাণ লিখিত গ্রন্থ মওজুদ ছিল (Journal Asiatik Society of bengal Vol 25 p. 380)

(ঘ) আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) তার জীবন সায়াহ্নে কতগুলো হাদীস লিপিবদ্ধ করেছিলেন এবং এসব লিখিত হাদীস ইবনে ওয়াহ্‌হাব ও উমাইয়াহ্‌ যামরীকে দেখিয়েছিলেন (জামিউল বয়ান ১ম ভাগ পৃঃ ৭৪)

আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) এর বর্ণিত হাদীসগুলো যে গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে তা “সহীফা” ইবনে হুমাম নামে পরিচিত (তাহযীবুত তাহযীব ১ম খন্ড ক্রমিক নম্বর ৫৭৫; মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বল ২য় খন্ড পৃঃ ৩১২-৩১৮)

রাসুল (সাঃ) স্বয়ং কতগুলো সাহাবাকে হাদীস লিখিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন

(ক) তাহযীবুত্‌ তাহযীব নামক গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে, আবু রাফি (রাঃ) নামক জনৈক সাহাবী রাসুল (সাঃ) এর নিকট হতে হাদীস লিপিবদ্ধ করে রাখার অনুমতি গ্রহণ করেছিলেন (তাহযীবুত্‌ তাহযীব ৩য় খন্ড পৃঃ ৪৪০)

(খ) এ কথা সর্বজনবিদিত যে, রাসুল (সাঃ) শুধুমাত্র একজন বনীই ছিলেন না বরং তিনি একাধারে নবী ও রাষ্ট্রপতি ছিলেন । রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য তাঁকে অনেক সময় প্রাদেশিক গভর্নরগণের নিকট লিখিত ফরমান জারী করতে হত ।

“কানযুল উম্মাল” নামক হাদীস গ্রন্থে রাসুল (সাঃ) এর এরূপ একখানি সুদীর্ঘ ফরমানের হুবহু নকল (True copy) আমরা দেখতে পাই । এ ফরমানখানি ইয়ামানের তদানীন্তন গভর্নর আমর বিন আল আস এর নিকট প্রেরিত হয়েছিল । এতে নামায, রোযা, সাদাকাহ্‌-যাকাত, দিয়াত (Compensation of murder) আকীদাহ্‌ ইত্যাদি বহু মাসআলা-মাসায়িলের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায় (কানযুল উম্মাল ৩য় খন্ড পৃঃ ১৮৬-১৮৭)

এ সম্বন্ধে Dr. Sprenger তার Life of Muhammet নামক পুস্তকে লিখেছেন-

“সাধারণতঃ এ বিশ্বাস পোষণ করা হয় যে, হিজরী সনের প্রথম শতাব্দীতে হাদীস সংরক্ষণের একমাত্র ব্যবস্থা ছিল তা মুখস্থ রাখা ।

ইউরোপের সত্যানুসন্ধিৎসু ব্যক্তিগণ ভুলবশতঃ এ ধারণা পোষণ করেন যে, বুখারীতে যেসব হাদীস উল্লিখিত হয়েছে তা ইমাম বুখারীর পূর্বে আর কেউ লিপিবদ্ধ করেনি ।

এ ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা ।

আব্দুল্লাহ বিন আমর এবং অন্যান্য সাহাবাগণ হাদীস লিপিবদ্ধ করে রাখতেন” (Life of muhd 66-67)

Goldziher লিখেছেনঃ হাদীস শাস্ত্রের ‘মতন’ শব্দটি যা ‘ইসনাদ’ এর প্রতিকুল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এ ভুল ধারণা নিরসনের জন্য যথেষ্ট যে, মুসলিমগণ তাকে (হাদীসকে) লিপিবদ্ধ করে রাখা অবৈধ মনে করতেন
এবং তারা তাকে শুধু মুখস্থই করে রাখতেন ।

এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, হাদীস লিপিবদ্ধ করে রাখা তার সংরক্ষণের একটি অতি প্রাচীনতম পন্থা (Muh, Stu. Vol. ii, p. 8-9)

হাদীসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইমামগণের নির্দেশ

মাযহাব পালনের ক্ষেত্রে মাযহাবের ইমামগণের কিছু মূলনীতি ও উপদেশ রয়েছে, তা আমরা অনেকেই জানি না ।

বিশেষ করে মতবিরোধপূর্ণ মাস’আলাগুলোতে তথ্যসূত্র দুর্বল হলেও নিজ নিজ মাযহাবের রায় অন্ধভাবে মেনে চলি অনেকেই

এমন অনুসরণের অনুমতি কি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিয়েছেন ?

কোন বিষয়ে দুর্বল হাদীসে আমল করা, অথচ একই বিষয়ে প্রাপ্ত বিশুদ্ধ হাদীসটি আমলে না আনা-

এমন অদ্ভুত, অযৌক্তিক আমলের নির্দেশ কি মাযহাবের ইমামগণ আমাদের দিয়েছেন ?       

এ বিষয়ে তাঁরা আমাদের কি উপদেশ দিয়েছেন, এতদসংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী নিম্নে তুলে ধরা হলো, 

· ১ ইমাম আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘হাদীস যেটা সহীহ, সেটাই আমার মাযহাব’ । (রাদ্দুল মুখতার ১/১৫৪; মুকাদ্দিমাতু উমদাতুর রিয়ায়াহ ১/১৪; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীন ১/৬৩) 

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার কোন সিদ্ধান্ত যদি রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশের বিপরীত হয়, তখন আমরা কী করব ?

ইমাম সাহেব বললেন, রাসুল (সাঃ) এর হাদিসের মুকাবিলায় আমার উক্তি ফেলে দিও

আবার তাকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনার কথা যদি সাহাবাদের উক্তির প্রতিকুল হয় তখন কী করতে হবে ?

ইমাম সাহেব বললেন, সাহাবাগণের উক্তির মুকাবিলায় আমার উক্তি প্রত্যাখ্যান করো । (ইরশাদ ২৬ পৃঃ; ইকদুল জীদ ৫৪ পৃঃ)

ইমাম সাহেব তার অন্ধ ভক্তদের লক্ষ্য করে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেনঃ

“সাবধান! আল্লাহর দীনে নিজের অভিমত প্রয়োগ করে কথা বলো না । সকল অবস্থাতেই সুন্নাতের অনুসরণ করে চলবে । যে ব্যক্তি সুন্নাতের নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে-সে বিপথগামী হবে” (মীযানে কুব্‌রা ১ম খন্ড ৯ পৃঃ) 

ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর মতে হাদিসের মুকাবিলায় রায় ও কিয়াসের কানাকড়িও মূল্য নেই । তিনি বলেছেন, “বিদ্বানদের ব্যক্তিগত অভিমত অপেক্ষা আমার কাছে দুর্বল হাদীসও অধিকতর প্রিয়” । (রদ্দুল মুহ্‌তার ১ম খন্ড ৫১ পৃঃ)

তিনি আরো বলেন- “মানুষ ততদিন পর্যন্ত সত্যপথে প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে হাদিসের অনুসন্ধানের অনুরাগ বিদ্যমান থাকবে । কিন্তু তারা যখন হাদিস পরিত্যাগ করে অন্য কিছুর সন্ধান করবে তখনই তারা বিপথগামী হবে” । (মীযান মিসরে মুদ্রিত ৪৯ পৃঃ)

· ২ ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘আমি নিছক একজন মানুষ । ভুল করি, শুদ্ধও করি । তাই আমার মতামতকে যাচাই করে দেখে নিও । কুর’আন ও সুন্নাহর সাথে যতটুকু মিলে সেটুকু গ্রহণ করো, আর গড়মিল পেলে সেটুকু বাদ দিয়ে দিও’ । (ইকাযুল হিমাম, পৃঃ ১০২; কওলুল মুফীদ ১৭ পৃঃ)

ইমাম মালিক (রহঃ) এর মৃত্যু শয্যায় তার অন্যতম ছাত্র আব্দুল্লাহ বিন মুসলিমা কা’নাবী তাকে দেখতে যান । সালামের পর তিনি তার শয্যাপার্শ্বে আসন গ্রহন করে দেখতে পান, ইমাম সাহেব কাঁদছেন । কা’নাবী বলেন, আমি আরয করলাম, আপনি কিসের জন্য ক্রন্দন করছেন ?

ইমাম সাহেব উত্তরে বললেন, কেন কাঁদব না ? আমি যদি না কাঁদি, তাহলে কাঁদবে কে ? আল্লাহর কসম! আমি আমার ব্যক্তিগত রায় অনুসারে নিজের বুদ্ধি ও বিবেচনা মতে যতগুলো ফাতাওয়া দিয়েছি তার প্রত্যেকটির বদলে যদি আমি একটি করে কোড়ার আঘাত খেতাম তাই ছিল আমার পক্ষে উত্তম । তাতে আমার মুক্তির পথ প্রশস্ত হ’ত । হায়! যদি আমার রায়-মত আমি ফাতাওয়া না দিতাম! (ইবনে খাল্লিকান ১ম খন্ড ৪৩৯ পৃঃ) 

· ৩ ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আমার কোনো কথা হাদীসের সাথে গড়মিল দেখতে পাও, তাহলে তোমরা হাদীস অনুযায়ী আমল করো, আমার নিজের উক্তিকে দেয়ালে ছুড়ে ফেল’ । (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ; ১/৩৫৭)

তিনি (রহঃ) বলেছেনঃ রাসুল (সাঃ) ব্যতিত আর কারোর কথাই দলিল নয়-তাদের সংখ্যা অধিক হলেও নয় । কিয়াস অথবা অন্য কোন বিষয়েও নয় । (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১৬৩ পৃঃ)

তিনি (রহঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের দীনের ব্যাপারে স্বয়ং বিবেচনা করে দেখো । কারন শধু তাকলিদ অর্থাৎ অন্ধ অনুসরণ দূষণীয় ব্যাপার । (মিনহাজুল মুবিন-আমাল বিল হাদিস ৮৩ পৃঃ)

তিনি (রহঃ) স্পষ্ট করেই বলেছেন, “আমার কোন উক্তি যদি রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশের প্রতিকুল দেখতে পাও, তাহলে রাসুল (সাঃ) এর হাদিসই অনুসরণ করবে, তোমরা আমার তাকলিদ করবে না” । (ইকদুল জীদ ৮১ পৃঃ)

একদা তিনি (রহঃ) স্বীয় এক ছাত্রকে বললেন, “হে আবু ইসহাক! আমার প্রত্যেকটি কথার তাকলিদ করো না-আমি যা বলি অন্ধভাবে তার অনুসরন না করে বিচার করে দেখবে । কারণ এ হচ্ছে দীনের ব্যাপার” (মীযানুল কুব্‌রা ১ম খন্ড ৬৩ পৃঃ)

রুবাই’আ বিন সুলাইমান বলেছেন, একদা এক ব্যক্তি ইমাম শাফি’ঈ (রহঃ) কে একটা মাসআলা জিজ্ঞেস করলেন । উত্তরে ইমাম শাফি’ঈ (রহঃ) বললেন, এ সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ হচ্ছে এই ।

জিজ্ঞাসাকারী পুনরায় বললেন, আপনার ফাতাওয়াও কি তাই ?

ইমাম শাফি’ঈ (রহঃ) তার কথা শুনে চমকে উঠলেন, তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে উঠল । মনে হ’ল যে তার রক্ত শুকিয়ে গেছে । ইমাম সাহেব বলে উঠলেন, ওরে হতভাগা! আমি রাসুল (সাঃ) এর হাদিস বর্ণনা করে যদি সেই মতে ফাতাওয়া না দেই-তাহলে কোন মাটি আমার ভার বহন করবে ? আর কোন আকাশ আমাকে ঢেকে রাখবে ?

রাসুল (সাঃ) এর হাদিস আমার মস্তক ও চক্ষুর উপর স্থাপিত । আর তাঁর হাদিসই আমার মাযহাব । (ইকাযুল হিম ১০০ পৃঃ)

আর এক সময়ে ইমাম শাফি’ঈ (রহঃ) কে হাদিস বর্ণনার পর জিজ্ঞাসাকারী প্রশ্ন করে-এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী ?

ইমাম শাফি’ঈ (রহঃ) বললেন, তুমি কি আমার কোমরে পৈতা দেখেছ ? তুমি কি আমাকে কোন গীর্জা থেকে বের হয়ে আসতে দেখেছ ? আমি বলছি, রাসুল (সাঃ) এরূপ বলেছেন আর তুমি জিজ্ঞেস করছ-এ বিষয়ে আমার অভিমত কী ?

তুমি কি মনে করছ আমি রাসুল (সাঃ) এর হাদিস রিওয়ায়াত করব আর আমার অভিমত হবে তার প্রতিকুল ? (ইকাযুল হিম ১০৪ পৃঃ)

তিনি (রহঃ) বলেন-তোমরা আমার গ্রন্থে যদি কোন কথা রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাতের প্রতিকুল দেখতে পাও, তাহলে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাত অনুসারে ব্যবস্থা দিও, আমার উক্তি ছেড়ে দিও । (ইকাযুল হিম ১০০ পৃঃ)

যেসব মাসআলায় রাসুল (সাঃ) এর সহিহ হাদিসের সমর্থন মিলবে তাই লিপিবদ্ধ করা সিদ্ধ । সহিহ হাদিসের পরিপন্থী আমার সমুদয় উক্তিকে আমি আমার জীবিতকালে এবং মৃত্যুর পরও প্রত্যাহার করে নিচ্ছি (ইকাযুল হিম ১০৪ পৃঃ)   

· ৪ ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘তুমি আমার মাযহাবের অন্ধ অনুকরণ করো না । মালেক, শাফেয়ী, আওযায়ী, সাওরী-তাঁদেরও না; বরং তাঁরা যেখান থেকে (সমাধান) নিয়েছেন তুমিও সেখান থেকেই নাও’ । (ইবনুল কাইয়িম রচিত ‘ঈলামুল মুওয়াক্কেয়িন; ২/৩০২)   

তিনি (রহঃ) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ হাদীসকে প্রত্যাখান করবে, সে লোক ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত’ । (ইবনুল জাওযী রচিত, আল মানাকির; ১৮২)  

তিনি (রহঃ) বলেন- “আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর উপর কারও কোন কথা বলার কোনই অধিকার নেই । (মীযান ১ম খন্ড ৫১ পৃঃ)

· ৫ আল্লামা ইবনে আবেদীন বলেন, ‘কোনো মাস’আলা সহীহ হাদীসের সাথে গড়মিল হলে ঐ হাদীসটিই আমল করবে । আর ঐ হাদীসই হবে তার মাযহাব । এরুপ আমল তাকে মাযহাব থেকে বের করে দেবে না । হানাফী হলে সে হানাফীই থেকে যাবে’ (রাদ্দুল মুখতার; ১/১৫৪)  

· ৬ সুনানে আবি দাউদ গ্রন্থের সংকলক মুহাদ্দিস আবু দাউদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘এমন কোনো লোক নেই, যার সব কথাই গ্রহণযোগ্য; কেবল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া’ (মাসাইলে ইমাম আহমদ; ২৭৬)   

আল্লাহ বলেন, “রাসুলের আহবানকে তোমরা তোমাদের একে অপরের প্রতি আহবানের মতো গণ্য করো না; তোমাদের মধ্যে যারা অলক্ষ্যে সরে পড়ে আল্লাহ তো তাদেরকে জানেন । সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে অথবা আপতিত হবে তাদের উপর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি” (সুরা নূর আয়াত ৬৩)

“যারা (সব) কথা শুনে, অতঃপর উত্তমগুলো আমল করে, তারাই হলো হেদায়াতপ্রাপ্ত, আর তারাই হলো বুদ্ধিমান’’ । (সূরা আয যুমারঃ আয়াত ১৮)

“জাযাকাল্লাহু খায়রান । আমীণ”


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন