সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১২

বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে


বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে



চাঁদের উদয়ের উপর নির্ভরশীল ইবাদত

রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ । আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী । কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে । আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে । আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুণ আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর- আল বাকারা আয়াত ১৮৫

পৃথিবীর সকল জীবিত লোকই এ মাস পাবে । তথাপী উক্ত আয়াতে “যে লোক এ মাসটি পাবে” কেন বলা হল ?

এর ব্যাখ্যায় যারা চাঁদের উদয়স্থলের বিভিন্নতা গ্রহন করে নিজ নিজ দেশে চাঁদ দেখে রোজা রাখতে হবে তারা বলে যে দেশে চাঁদ দেখা গেল তারা এ মাস পেল । যে দেশে চাঁদ দেখা গেল না তারা এ মাস পেল না । তাদের দেশে চাঁদ দেখার পরে পাবে ।

আয়াতে অসুস্থ, মুসাফির ব্যক্তির কথাও আছে । অর্থাৎ দেশের সকলে মাস পেয়ে রোজা রাখলেও অসুস্থ, মুসাফির অন্য মাসে সুস্থ, মুক্বীম অবস্থায় রোজা রাখতে পারবে।

অর্থাৎ সামগ্রীকভাবে বলা যারা এ মাসে রোজা রাখতে পারবে তারা এ মাস পেল আর যারা রোজা রাখতে পারল না তারা এ মাস পেল না [অসুস্থ, মুসাফির, নামে মুসলমান (ইচ্ছাকৃত ভাবে রোজা রাখেনা) ও ভিন্ন ধর্মাবলী অন্যান্যরা]

ইসলামে মাসের শুরুর তারিখ নির্ধারিত হয় নতুন চাঁদের উদয়ের উপর নির্ভর করে ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
       يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ ۖ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ ۗ

তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে । বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য (মাসের) সময় (তারিখ) নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় (তারিখ) ঠিক করার মাধ্যম (সূরাহ আল বাকারাহ- ১৮৯)

চাঁদ দেখা

*রসূল সা: বলেন, তোমরা রোজা রাখবে না, যে পর্যন্ত না চাঁদ দেখতে পাও  একইভাবে তোমরা রোজা ভঙ্গ (ঈদ) করবে না, যে পর্যন্ত না শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পাও । তবে যদি মেঘের কারনে তা তোমাদের কাছে গোপন থাকে, তবে শাবান মাস পূর্ণ করবে ত্রিশ দিনে  অপর বর্ণনায় আছে, তিঁনি (সাঃ) বলেন- মাস কখনও উনত্রিশ দিনেও হয় (সূত্র: সহীহ বুখারী-৩য় খন্ড, ১৭৮৫-১৭৯০, সহীহ মুসলিম-৩য় খন্ড, ২৩৬৭-২৩৯৪)

মুহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেছেন, “ঐ রোযা আরম্ভ হবে যেদিন সকলে রোযা রাখবে, রোযা ভাঙ্গতে হবে ঐ দিন যেদিন সবাই রোযা ভাঙ্গে আর কুরবানী করতে হবে ঐ দিন যে দিন সকলে কুরবানী করে” (তিরমিযী, হাদিস নং ৬৯৭)

উপরের হাদিসে কি বুঝা যায়ঃ-

১) রমযনের সঠিক তারিখ জানার পূর্বে শা’বান মাসের চাঁদ দেখে সঠিকভাবে শা’বানের শুরু তারিখ নির্ধারণ করা । অথচ রমযানের চাঁদ দেখার উপর বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয় । শা’বানের (যে কোন মাসের) ২৯ তারিখের দিবাগত রাত্রে চাঁদ দেখা না গেলে মাস ৩০ দিনে শেষ হবে এবং ৩০ তারিখের দিবাগত রাত্র থেকে (পরবর্তী মাস) রমযান মাসের শুরু হবে (চাঁদ না দেখা গেলেও)

অতএব রমযানের চেয়ে শা’বানের চাঁদ দেখার গুরুত্ব বেশী (আরবী সকল মাসের চাঁদ দেখার গুরুত্ব আছে)

আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুহাম্মদ (সাঃ) শাবানের মাসের দিন গণনার ক্ষেত্রে অতিশয় সাবধানতা অবলম্বন করতেন এবং তিনি যখনই নতুন চাঁদ দেখতে পেতেন তখন রোযা শুরু করতেন । আর যদি নতুন চাঁদ না দেখতে পেতেন তাহলে শাবান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করে রোযা রাখতেন” (আবু দাউদ হাদিস নং ২৩১৮)

২) “তোমরা, না চাঁদ দেখতে পাও” কথা দ্বারা বুঝা যায় পৃথিবীর সকল মানুষ যারা স্বচক্ষে চাঁদ না দেখবে রোজা রাখবে না, ঈদ করবে না; যারা দেখবে রোজা রাখবে, ঈদ করবে (এমন নয়) । আর কেউই চাঁদ না দেখলে ৩০ শে শা’বানের দিবাগত রাত্র থেকে রোজা রাখবে । রাসুল (সাঃ) এর সমাধান করে গেছেন নিম্নের হাদিস দ্বারা   

এক জন মুসলমানের স্বাক্ষীর উপর রোযা শুরু করা যেতে পারে ।

হযরত ইবনে উমর (রাজিঃ) বলেন, লোকেরা চাঁদ দেখেছে আমি নবী করীম (সাঃ) কে বললাম, আমিও চাঁদ দেখেছি, তখন নবী (সাঃ) নিজেও রোযা রাখলেন এবং লোকজনকেও রোযা রাখার আদেশ দিলেন-সহিহু সুনানি আবিদাউদ ২/৫৫ হাদিস নং ২৩৪২; আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৫, দারেমী 

* একবার সাহাবীগণ রমজানের চাঁদ দেখা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন । তারা তারাবিহ নামাজ না পড়ার এবং পরদিন রোজা না রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন । এমতাবস্থায় ‘হাররা’ নামক এক স্থান থেকে জনৈক বেদুইন এসে সাক্ষ্য দেয় যে, সে চাঁদ দেখেছে  তখন তাকে রসূল সা: এর দরবারে নিয়ে আসা হয় । রসূল সা: তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল ? সে বলে, হ্যা আমি সাক্ষ্য দেই এবং আরও সাক্ষ্য দেই যে, আমি নতুন চাঁদ দেখেছি । অত:পর রসূল সা: হযরত বেলাল রা: কে নির্দেশ দিলেন, লোকদেরকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যে যাতে তারা তারাবিহ নামাজ পড়ে এবং পরদিন রোজা রাখে (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩, ২৩৩৪, তিরমিযী,নাসাঈ, ইবনে মাজাহ,দারেমী)

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে এমন এক ব্যক্তির চাঁদ দেখাই যথেষ্ট, যার দ্বীনদার হওয়া প্রমাণিত অথবা বাহ্যিকভাবে দ্বীনদার হিসেবে পরিচিত (সুনানে আবু দাউদ হাঃ/২৩৪০)

দুই জন মুসলমানের স্বাক্ষীর উপর রোজা শেষ করা যেতে পারে ।

* রসূল সা: আমাদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন যে, আমরা যেন শাওয়ালের চাঁদ দেখাকে ইবাদত হিসেবে গুরুত্ব দেই  আর আমরা স্বচক্ষে যদি তা না দেখি তবে দুজন ন্যায় পরায়ন লোক এ ব্যাপারে স্বাক্ষ্য প্রদান করলে তখন আমরা যেন তাদের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করি (সূত্র: আবু দাউদ-৩য় খন্ড/২৩৩১, ২৩৩২)

হযরত আবু উমাইর ইবনে আনাস (রাঃ) আপন এক আনসারী চাচা থেকে বর্ণনা করেন তারা বলেছেন মেঘের কারনে আমরা শাওয়ালের চাঁদ দেখিনি বলে রোযা রেখেছিলাম । পরে দিনের শেষ ভাগে একটি কাফেলা আসল । তারা নবী করিম (সঃ) এর কাছে রাত্রে চাঁদ দেখেছে বলে সাক্ষী দিল । হুজুর (সঃ) লোকজনকে সে দিনের রোযা ভেঙ্গে দেয়ার আদেশ দিলেন এবং তার পরের দিন সকলে ঈদের নামাযে আসতে বললেন (আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, সহীহু সুনানি আবি দাউদ ১/৬৮৪ হাঃ ১১৫৭)

* একবার লোকেরা রমজানের শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখা নিয়ে মতভেদ করেন  তখন দুজন বেদুইন রসূল সা: এর কাছে হাজির হয়ে আল্লাহর কসম করে সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, গত সন্ধ্যায় তারা শাওয়ালের চাঁদ দেখেছে । তখন রসূল সা: লোকদেরকে রোজা ভাঙ্গার নির্দেশ দেন । রাবী খালফ তার হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, রসূল সা: আরও বলেন যে, লোকেরা যেন আগামীকাল ঈদগাহে আসে” (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩, ২৩৩৪)

সুতরাং অধিকাংশ আলেম বলেন যে রোযা রাখার জন্য একজন দর্শক হলেই চলবে তবে রোযা ভঙ্গ করার জন্য দুইজন দর্শক প্রয়োজন ।

চাঁদ দেখার স্বাক্ষী নিজ দেশের লোক, পার্শ্ববতী দেশের লোক, পৃথিবীর যে কোন দেশের লোক কোথাকার হবে অর্থাৎ “তোমরা” “সবাই” “সকলে” বলতে কাদের বুঝিয়েছেন ?

                                                                           (চলবে)

৩য় অংশ- http://sottersondhane.blogspot.com/2013/05/blog-post.html (pls click & read)

৩য় অংশে বিশ্বে চাঁদ দেখার বিভিন্নতা এবং একই ইবাদতের দিন দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয় । এর কিছু তথ্য পাবেন । 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন