শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১২

আহার করার কিছু শরীয় আদব কায়দা


আহার করার কিছু শরীয় আদব কায়দা

আহার করাঃ তোমাদের জন্য কোন দোষ নেই । তোমরা সবাই এক সাথে খাও কিংবা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে খাও (সুরা নূর আয়াত ৬১);

রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন তোমরা সবাই এক সাথে খাও এবং ভিন্ন ভিন্ন হয়ো না । কারণ জামাআতের সাথে খাওয়াতে বরকত আছে (ইবনে মাজাহ, মেশকাত ৩৭০ পৃঃ)

কতটুকু খেতে হবেঃ রাসুল (সাঃ) বলেন কোন মানুষই পেটের চেয়ে জঘন্য পাত্র ভর্তি করে না । আদম সন্তানের জন্য ঐ কয়েক লুকমা খাওয়াই যথেষ্ট যা তার পিঠটাকে সোজা রাখে । তবে হ্যাঁ যদি আর কিছু বেশী খাবার জরুরী মনে করে । তাহলে পেটের তিন ভাগের এক ভাগ হবে খাবার জন্য এবং তিন ভাগের এক ভাগ হবে তার পান করার জন্য আর অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ হবে তার শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্য (তিরমিযী ২/৬০; মেশকাত ৪৪২ পৃঃ)

নবী (সাঃ) বলেন খাবার সময় “বিস্‌মিল্লাহ” বল এবং ডান হাতে খাও । যে ব্যক্তি খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ্‌ বলতে ভুলে গেল সে যেন বলে “বিস্‌মিল্লাহি আউওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু” । অর্থঃ খাবার শুরু ও শেষ আল্লাহর নামে (তিরমিযী, আবু দাউদ, মেশকাত ৩৬৫ পৃঃ)

নবী (সাঃ) বাম হাতে পানাহার করতে নিষেধ করেছেন । কেননা শয়তান বাম হাতে পানাহার করে (মুসলিম, মেশকাত ৩৬৩ পৃঃ)

নবী (সাঃ) বলেন আল্লাহ্‌ ঐ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যে এক লোকমাহ খায় এবং “আলহামদুলিল্লাহ” বলে আল্লাহর প্রশংসা করে অনুরুপ এক ঢোক পান করে এবং আল্লাহর প্রশংসা করে (মুসলিম, মেশকাত ৩৬৫ পৃঃ)

রাসুল (সাঃ) বলেন খাবার সময় কোন খাদ্য পড়ে গেলে তা থেকে ময়লা দূর করে
খেয়ে ফেল । শয়তানের জন্য ছেড়ে দিওনা (মুসলিম ২/১৭৬ পৃঃ; মেশকাত ৩৬৩ পৃঃ)

খাওয়ার শেষে আঙ্গুল চেটে খাওয়া সুন্নাত (মুসলিম ২/১৭৫ পৃঃ);

নবী (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি কোন পাত্রে খায় । তারপর সে যদি ঐ পাত্রটি চেটে খায়, তাহলে তার জন্য ঐ পাত্রটি ক্ষমা প্রার্থনা করে । অন্য বর্ণনায় আছে ঐ পাত্রটি তার জন্য বলে, আল্লাহ্‌ তোমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন যেমন তুমি আমাকে শয়তান থেকে রক্ষা করেছ (তিরমিযী, মেশকাত ৩৬৬, ৬৮ পৃঃ)

খাওয়া শেষে রাসুল (সাঃ) নিজের হাত দুটো ধুয়ে ভিজা হাতের তালু নিজের মুখমন্ডলে এবং দুই হাতে মুছে নিতেন (তিরমিযী, মেশকাত ৩৬৭ পৃঃ)

কাঁচা পাকা ফল দেখে দু’আঃ আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী ছামারিনা ও বারিক লানা ফী মাদীনাতিনা ওয়া বারিক লানা ফী ছাইনা ওয়া বারিক লানা ফী মুদ্দিনা ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য আমাদের ফলের মধ্যে বরকত দান কর । আমাদের শহর এবং আমাদের “সা” (মাপের কাটা বা পাত্র) ও মুদে (মাপের ছোট কাটা বা পাত্র) বরকত দান কর (মুসলিম ২/১০০০)

পানাহার শেষে দু’আঃ আলহামদুলিল্লা হিল্লাযী আত্বআমানা ওয়া সাকানা ওয়া জাআলালনা মুসলিমীন ।
অর্থঃ আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে পানাহার করালেন এবং আমাদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন (তিরমযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, মেশকাত ৩৬৫ পৃঃ)

পান করার বিভিন্ন আদব কায়দাঃ আনাস (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) কোন কিছু পান করতে তিনবার দম নিতেন । অর্থাৎ গরুর মত একদমে পান করতেন না (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৩৭০ পৃঃ);

রাসুল (সাঃ) পান পাত্রে নি:শ্বাস ফেলতে এবং ফুঁক দিতে নিষেধ করেছেন (আবু দাউদ, তিরমিযী, মেশকাত ৩৭১ পৃঃ)

খাবার পরিবেশন কারী ডান দিক থেকে খাবার পরিবেশন করবেঃ রাসুল (সাঃ) কে একবার বকরীর দুধের একটি বাটি দেয়া হয় । তিনি তা পান করেন । এমতাবস্থায় তাঁর বামে আবু বকর (রাযিঃ) এবং ডানে দেহাতী গ্রাম্য ব্যক্তি ছিলেন । এ সময় উমর (রাযিঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আবু বকরকে দিন । কিন্তু তিনি তা দেহাতীকেই দিলেন যিনি তাঁর ডানে ছিলেন । অতঃপর তিনি বললেন, ডানওয়ালা তারপর ডানওয়ালা (বুখারী, মুসলিম মেশকাত ৩৭১ পৃঃ)

দুধ পানের দু’আঃ আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়া যিদনা মিন্‌হ ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! এতে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চেয়েও বেশী করে দাও (তিরমিযী, আবু দাউদ, মেশকাত ৩৭১ পৃঃ)

কেউ কোন কিছু পান করালে অথবা পান করানোর ইচ্ছা করলে তার জন্য
 দু’আঃ আল্লাহুম্মা আত্বইম মান আত্বআমানী ওয়াসক্বী মান সাক্বানী ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! যে আমাকে খাওয়াল বা খাওয়ানোর ইচ্ছা করল তাকে তুমি পর্যাপ্ত খাবার দিও । আর যে আমাকে পান করাল বা পান করানোর ইচ্ছা করল তাকে তুমি পান করাইও (মুসলিম ৩/১২৬ পৃঃ)

কারো বাড়িতে ইফতার করলে যে দু’আ পড়তে হয়ঃ
আফতারা ইন্‌দাকুমুস সাইমূন, ওয়া আকালা ত্বাআমাকুমুল আব্‌রার, ওয়া সাল্লাতা আলাইকুমুল মালাইকাহ্‌!
অর্থঃ তোমার নিকট রোযাদারেরা ইফতার করুক, তোমাদের খাদ্য সৎ লোকেরা গ্রহণ করুক এবং তোমাদের জন্য ফিরিশতাগণ ক্ষমা প্রার্থনা করুক (আবু দাউদ ৩/৩৬৭)

রাসুল (সাঃ) বলেন তোমাদের কার পান পাত্রে যদি মাছি পড়ে যায় তাহলে সে যেন এটাকে পুরাপুরি ডুবিয়ে দেয় । তারপর সে যেন এটাকে তুলে ফেলে দেয় । অতঃপর পান করে । কারণ মাছির একটি ডানায় ঔষধ থাকে অন্য ডানায় রোগ থাকে । সে প্রথমে তার রোগযুক্ত ডানাটিই ডুবিয়ে দেয় (বুখারী, মেশকাত ৩৬০ পৃঃ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন