দান ও যাকাত না
দেয়ায় দুনইয়ার ও আখিরাতের ভয়াবহ শাস্তি
যারা সোনা, রূপাকে জমা করে রাখে এবং তা
আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদের কপালে, শরীরের পার্শ্বে ও পিঠে ছেক দেয়া হবে
। (আর বলা হবে) এটা হচ্ছে ঐ সম্পদ যা তোমরা জমা করে রেখেছিলে নিজেদের জন্য । আর ঐ
জিনিস জমা রাখার শাস্তি গ্রহন কর (তওবাহ আয়াত ৩৪-৩৫)
যাকাত যে মালের
সাথে মিশ্রিত হয়ে থাকে তা অবশ্যই
বিপর্যয়ের শিকার হবে (মেশকাত হাদিস ১৭০১/১২);
সম্পদের অধিকারী
কোন ব্যক্তি যদি যাকাত না দেয় তবে ক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত জিনিসকে জাহান্নামের আগুনে গরম করে পাত বানানো হবে,
তারপর এর দ্বারা পার্শ্ব, কপাল ও অন্যান্য
অঙ্গে ছেক দেয়া চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ বিচার শেষ করেন । ঐ দিন
হবে পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমান । তারপর তার নির্দিষ্ট স্থান হবে হয় জান্নাত না হয় জাহান্নাম (মুসলিম হাদিস ২১৬১);
যে ব্যক্তিকে
আল্লাহ তা’আলা সম্পদের অধিকারী করেছেন, তিনি যদি যাকাত আদায় না করেন তবে ঐ সম্পদকে
এক শক্তিশালী টাক মাথা, দু’শিংওয়ালা রুপে
উঠানো হবে যা তাকে ক্বিয়ামতের দিন আঘাত করতে থাকবে । তারপর তাকে দাঁত দিয়ে
কামড়াবে ও বলবেঃ আমি তোমার মাল, আমি তোমার গুপ্ত সম্পদ (বুখারী হাদিস ৬৩৭৪);
যাদেরকে উট, গরু বা
ছাগলের অধিকারী করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তাদের যাকাত আদায় করেনি, তখন ঐ পশুদের
ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে আরো বড় ও
মোটা করে । তখন তারা তাদের মালিককে
শিং ও পা দ্বারা আঘাত করতে থাকবে । যখন একটি ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন অন্যটি শুরু
করবে । আর এটা চলতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না বিচার শেষ হবে (মুসলিম
হাদিস ২১৬৮)
লোক দেখানো দান বৃথাঃ হে ঈমানদারগণ! দানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাতকে সে
ব্যক্তির ন্যায় ব্যর্থ করে দিও না যে
নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে, অথচ সে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী নয়
। তার তুলনা সেই মসৃণ পাথরের মত, যাতে
সামান্য কিছু মাটি আছে, অতঃপর প্রবল বৃষ্টিপাত তাকে পরিষ্কার করে ফেলে । তার স্বীয়
কৃত কার্যের ফল কিছুই পাবে না; আল্লাহ কাফিরদেরকে পথপ্রদর্শন করেন না (বাকারা আয়াত
২৬৪);
যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে দান কর এবং তা অভাব গ্রস্থদেরকে
দান কর, তবে তাও তোমাদের জন্য আরও উত্তম,
অধিকন্তু তিনি তোমাদের কিছু গুনাহ মোচন করে দেবেন, বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা করছ,
আল্লাহ তার খবর রাখেন (বাকারা আয়াত ২৭১)
কৃপণতার পরিনামঃ মু’মিন কৃপণ হয় না; আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)
বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন-এ দু’টি স্বভাব কোন মু’মিনের মধ্যে একত্রিত হতে পারে না-কৃপণতা ও দুর্ব্যবহার খারাপ চরিত্র
(তিরমিযী, মেশকাত হাদিস ১৭৭৮)
কৃপণের প্রতি অভিশাপঃ আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী
(সাঃ) বলেছেন-প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা
অবতরণ করেন । তাদের একজন বলেন হে
আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন (বিখারী হাদিস ১৩৪৯, মুসলিম হাদিস
২২০৬)
কৃপণ ও দান করে
খোটা দাতা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে নাঃ আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ)
বলেছেন-জান্নাতে প্রবেশ করবে না প্রতারক, কৃপণ
এবং যে ব্যক্তি দান করে খোটা দেয় (তিরমি্যী, মেশকাত হাদিস ১৭৭৯)
ধন-সম্পদ অশান্তির কারনঃ আল্লাহ বলেন, “যে
ধন সম্পদ জমা করে আর বার বার গুনে, সে মনে করে যে, তার ধন-সম্পদ চিরকাল তার সাথে
থাকবে, কক্ষনো না, তাকে অবশ্যই চূর্ণ
বিচূর্ণকারীর মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে । তুমি কি জান চূর্ণ বিচূর্ণকারী কী? তা
আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে (অর্থাৎ জাহান্নামীর
বোধশক্তিকে নাড়িয়ে দিবে-কী কারনে তাকে জাহান্নামে জ্বলতে হচ্ছে?) তা তাদেরকে
চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রাখবে (হুমাযাহ আয়াত ২-৮);
আর তাদের ধন-মালের প্রাচুর্য ও সন্তান-সন্তানি যেন
আপনাকে ধোঁকায় না ফেলে । আল্লাহ তো ইচ্ছাই করেছেন যে, এসবের জন্যই তাদেরকে
দুনইয়াতে আযাবের মধ্যে রাখবেন এবং তাদের প্রাণ কুফরের অবস্থায় বের হয়ে যাবে
(তাওবাহ আয়াত ৫৫-৮৫)
আল্লাহ আর বলেন-আর ধন মাল তার কোন কাজে আসবে না, যখন সে ধ্বংস
হয়ে যাবে (লাইল আয়াত ১১)
অপচয় কারীদের পরিনামঃ আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল
(সাঃ) ক্বাবার ছায়ায় বসাছিলেন । এমন সময় আমি গিয়ে তাঁর সামনে উপস্থিত হলাম । তিনি
আমাকে দেখে বললেন-ক্বাবার প্রভুর শপথ!
তারা ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত । বর্ণাকারী বলেন, অতঃপর আমি গিয়ে তাঁর পাশে বসলাম
কিন্তু বসে থাকতে পারলাম না । উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমার
মাতা পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, সে ক্ষতিগ্রস্থ লোকেরা কারা ? তিনি বললেন-এরা এমন সব ধনাঢ্য ব্যক্তি যারা এখানে সেখানে
ইচ্ছে মত খরচ করে এবং সামনে থেকে, পিছন থেকে, ডান থেকে ও বাম দিক থেকে অকাতরে
(অপ্রয়োজনে ও অপাত্রে) খরচ করে । আর তাদের মধ্যে এমন লোক খুব কমই আছে যারা জিহাদ ও
দ্বীনের সাহায্যের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য খরচ করে । আর
যে সব উট, গরু ও ছাগলের মালিক এর যাকাত আদায় করে না ক্বিয়ামতের দিন এসব জন্তু
পৃথিবীতে যেভাবে ছিল তার চেয়ে অনেকগুন মোটা তাজা ও চর্বিযুক্ত হয়ে এসে তাকে
(মালিককে) পা দিয়ে দলিত মথিত করবে এবং শিং দিয়ে আঘাত করবে । এর শেষ পশুটি অতিক্রম
করলে প্রথমটি পুনরায় এসে ঐরুপ করতে আরম্ভ করবে । আর এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ না
বান্দাদের বিচার শেষ হবে (মুসলিম হাদিস ২১৭১)
যাকাত অমান্যকারী
কাফির
ইসলামী শরীয়াতে
যাকাত ফরয এবং এটি এমনই গুরুত্বপূর্ণ যে এর অস্বীকার কারীকে ও এর অমান্যকারীকে “আলিমগণ কাফির হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন এবং
বলেছেন যে ধনুক থেকে যেমন তীর বের হয়ে যায় ঠিক তেমনিভাবে সেও ইসলাম থেকে বের হয়ে
যায় । ইমাম নবাবী (রহঃ) বলেন-যাকাত দেয়া ফরয এ কথা স্বীকার করে কেউ যদি তা
দিতে অস্বীকার করে তাহলে দেখতে হবে সে
নওমুসলিম কিনা যে এ সম্পর্কে না জানার দরুন কিংবা সমাজ-সভ্যতা থেকে দূরে
বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারনে এরূপ করেছে । এরূপ হলে তাকে কাফির বলা যাবে না । তাকে
তখন ভালভাবে জানাতে ও বোঝাতে হবে এবং
তারপর তার কাছ থেকে যাকাত নিয়ে নিতে হবে । এ সময় যদি সে দিতে অস্বীকার করে তাহলে কাফির বলতে হবে । কিন্তু যদি এমন হয় যে, লোকটি মুসলিম, মুসলিম সমাজেই বাস, এ
বিষয়ে কোন কিছুই তার অজানা নয়, তারপরও
সে অস্বীকার করছে, তবে সেক্ষেত্রে সে নির্ঘাত কাফির বলে গণ্য হবে (আবুল হাসান
নদভী লিখিত পুস্তকের বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান ১০২ পৃষ্টা)
যদি তারা তাওবাহ্ করে এবং সালাত
কায়িম করে এবং যাকাত আদায় করে তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই (তাওবাহ আয়াত ১১)
“আমীন”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন