মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১২

আক্বীকার কিছু মাসায়েল


আক্বীকার কিছু মাসায়েল


রাসুল (ছঃ) বলেন সন্তানের সাথে আক্বীকা জড়িত । অতএব তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহত কর এবং তার থেকে কষ্ট দূর করে দাও (বুখারী, মেশকাত হা/৪১৪৯ আক্বীকা অনুচ্ছেদ)

তিনি (ছঃ) বলেন প্রত্যেক শিশু তার আক্বীকার সাথে বন্ধক থাকে । অতএব জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেক পশু যবেহ করতে হয়, নাম রাখতে হয় ও তার মাথা মুন্ডন করতে হয় (আবুদাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আহমদ, ইরওয়া হা/১১৬৫)

ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, আক্বীকার সাথে শিশু বন্ধক থাকে- একথার ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, যদি বাচ্চা আক্বীকা ছাড়াই শৈশবে মারা যায়, তা’হলে সে তার পিতা মাতার জন্য ক্বিয়ামতের দিন শাফা’আত করবে না

কেউ বলেছেন, আক্বীকা যে অবশ্য করণীয় এবং অপরিহার্য বিষয়, সেটা বুঝানোর জন্যই এখানে বন্ধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা পরিশোধ না করা পর্যন্ত বন্ধকদাতার নিকট বন্ধক গ্রহিতা আবদ্ধ থাকে (শাওকানী, নায়লুল আওতার ৬/২৬০ পৃঃ আক্বীকা অধ্যায়)

শাফেঈ বিদ্বানগণের মতে সাত দিনে আক্বীকার বিষয়টি সীমা নির্দেশ মুলক নয় বরং এখতিয়ার মুলক ।

ইমাম শাফেঈ বলেন, সাত দিনে আক্বীকার অর্থ হল, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ সাত দিনের পরে আক্বীকা করবে না

যদি কোন কারনে বিলম্ব হয়, এমনকি সন্তান বালেগ হয়ে যায়, তাহলে তার পক্ষে তার অভিভাবকের আক্বীকার দায়ত্ব শেষ হয়ে যায় । এমতাবস্থায় সে নিজের আক্বীকা নিজে করতে পারবে (নায়লুল আওতার ৬/২৬১ পৃঃ)

সাত দিনের পূর্বে শিশু মারা গেলে তার জন্য আক্বীকার কর্তব্য শেষ হয়ে যায় (নায়লুল আওতার ৬/২৬১ পৃঃ)

আক্বীকা ও কুরবানী একই দিনে হলে, সম্ভব হলে দু’টিই করবে । নইলে কেবল আক্বীকা করবে ।

কেননা আক্বীকা জীবনে একবার হয় এবং তা সপ্তম দিনেই করতে হয় । কিন্তু কুরবানী প্রতি বছর করা যায় ।

‘কুরবানী ও আক্বীক্বা দু’টিরই উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা’ এই (ইসতিহসানের) যুক্তি দেখিয়ে কোন কোন হানাফী বিদ্বান কুরবানীর গরু বা উটে এক বা একাধিক সন্তানের আক্বীক্বা সিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন যা এদেশে অনেকের মধ্যে চালু আছে- বুরহানুদ্দীন মারগীনানী, হেদায়া (দিল্লীঃ ১৩৫৮ হিঃ) ‘কুরবানী’ অধ্যায় ৪/৪৩৩; ঐ ( দেউবন্দ ছাপা ১৪০০ হিঃ) ৪/৪৪৯ পৃঃ; আশরাফ আলী থানভী, বেহেশতী জেওর (ঢাকাঃ এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ১০ম মুদ্রণ ১৯৯০) ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায় মাসয়ালা ২, ১/৩০০ পৃঃ)

হানাফী মাযহাবের স্তম্ভ বলে খ্যাত ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) এই মতের বিরোধিতা করেন ।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) এর ঘোর প্রতিবাদ করে বলেন, এটি শরী‘আত, এখানে সুনির্দিষ্ট দলীল ব্যতীত কিছুই প্রমাণ করা সম্ভব নয়- নায়লুল আওত্বার, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায় ৬/২৬৮ পৃঃ ।

বলা আবশ্যক যে, কুরবানীর পশুতে আক্বীকার ভাগ নেওয়ার কোন প্রমান রাসুল (ছঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের কোন কথা ও কর্মে পাওয়া যায় না

গরু দিয়ে আকীকা করাঃ البقر في العقيقة কোন হাদীসেই গরু দিয়ে আকীকা করার কথা উল্লেখ হয়নি । অথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে সব ধরণের পশুই বিদ্যমান ছিল । সুতরাং উত্তম হচ্ছে ছাগল বা দুম্বা দিয়েই আকীকা করা

গরু দিয়ে আকীকা করা হলে একদল আলেমের মতে তা জায়েয হবে । তবে শর্ত হচ্ছে একজন সন্তানের পক্ষ হতে একটি গরু দিয়ে আকীকা করতে হবে

আকীকা যেহেতু একটি এবাদত, তাই হাদীছে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই পালন করা উচিত   
    
কোরবানীর সাথে ভাগে আকীকা দেয়াঃ الاشتراك في العقيقة مع الأضحية আমাদের দেশে সাতভাগে গরু দিয়ে কুরবানী করার ক্ষেত্রে আকীকার অংশীদার হওয়ার নিয়ম ব্যপকভাবে প্রচলিত আছে । এটি হাদীছ সম্মত নয়

হাদিসে আক্বীকার পশু ছাগল, দুম্বার কথা স্পষ্টকরে উল্লেখ আছে, গরু উল্লেখ নাই

আবার কারো মতে একটি প্রাণের বিনিময়ে একটি প্রাণ এ হিসাবে একটি গরু দিয়ে যদি একজন সন্তানের আকীকা করা ঠিক হয়, তাহলে কুরবানীর গরুর সাথে ভাগে আকীকা করা সঠিক হওয়ার প্রশ্নই আসে না

ভুল সংশোধনঃ-অধিকাংশ জ্ঞানীদের মত, আমাদের না জানার কারনে, যাদের ভুল হয়ে গেছে অর্থাৎ দিনে ভুল হয়েছে, এক পশুতে কয়েক সন্তানের অথবা কুরবানীর সাথে ভাগে আক্বীকা করেছি ।

এ ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করি যেন আল্লাহ আমাদের সন্তানের আক্বীকা কবুল করেন ।

আর যাদের সময় দিন পার হয়ে গেছে এখনও সন্তানের আক্বীকা করেন নাই, তাহলে সামর্থ থাকলে শীঘ্রই করে ফেলুন এবং আল্লাহর কাছে জোড়ালভাবে আকুতি মিনতী করে দোয়া করুন যেন আল্লাহ আমাদের দায় মুক্ত করেন ।

তবে এক পশুতে কয়কজন সন্তান ও কুরবানীর পশুর সাথে ভাগে যেন না হয় এটা খেয়াল রাখবেন ।

আমাদের সন্তানেরা যেন ভবিষ্যতে ভুল না করে সে জন্য কুরআন হাদীসের ছহীহ বাণী তাদের কাছে প্রচার করার আহবান রইল

“আমীণ”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন