আল্লাহর অবস্থান
সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি
পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে আমাদেরকে ইসলাম দান করেছেন, যে দ্বীনে মানুষের পক্ষ থেকে
কোন সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হয় না ৷ সালাত ও সালাম তাঁরই রাসূল
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি, যিনি আল্লাহর দ্বীনের রিসালাতের দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে আদায়
করেছেন, কোথাও কোন কার্পণ্য করেননি ৷ দ্বীন হিসাবে যা কিছু এসেছে তিনি তা উম্মতের কাছে পৌছে দিয়েছেন ও নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে গেছেন ৷ তার সাহাবায়ে কিরামের প্রতি আল্লাহর রাহমাত বর্ষিত হোক,
যারা ছিলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর আদর্শ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ পালনে সকলের চেয়ে অগ্রগামী ৷
কুরআনঃ
অতঃপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন (সুরাঃ
আ’রাফ-৫৪, ইউনুস-৩, রা’দ-২, সেজদা-৪)
তিনি পরম দয়াময়, আরশে সমাসীন হয়েছেন (সুরাঃ ত্বোয়া-হা-৫,
ফুরকান-৫৯, হাদীদ-৪)
তোমরা কি
ভাবনামুক্ত হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন
তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বলীন করে দেবেন, অতঃপর তা কাঁপতে থকবে । না তোমরা নিশ্চিত
হয়ে গেছ যে, আকাশে যিনি আছেন । তিনি তোমাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন,
অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সর্তকবানী (সুরাঃ মূলক-১৬, ১৭)
ফেরেস্তাগণ এবং রূহ
আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয়(সুরাঃ
মা’আরিজ-৪)
তারই দিকে আরোহন করে উত্তম কথা এবং সৎকর্ম তাকে
তুলে নেয় (সুরাঃ ফাতির-১০)
বরং আল্লাহ তাঁকে
[ঈশা (আঃ)] উঠিয়ে নিয়েছেন নিজের দিকে (সুরাঃ
নিসা-১৫৮)
এটি একটি কিতাব যা
আমি তোমার প্রতি অবতরণ (নাযিল) করেছি যাতে
তুমি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন (সুরাঃ ইবরাহীম-১)
নিশ্চিত আমি তোমার
প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতরণ করেছি, যাতে
তুমি আল্লাহ তোমাকে যা বুঝায়েছেন তা দিয়ে মানুষের মধ্যে শাসন ও ফায়সালা করতে পার
(সুরাঃ নিসা-১০৫)
নিশ্চয় আমি ইহা কদরের রাত্রে নাযিল (অবতরণ) করেছি (সুরাঃ
ক্বদর-১)
নিশ্চয় আমি তোমাকে
বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি (সুরাঃ
বাক্বারা-১৪৪)
তিনি (আল্লাহ)
বললেন, তোমরা ভয় করো না । আমি তোমাদের সাথে
আছি আমি শুনি ও দেখি (সুরাঃ ত্বোয়া-হা-৪৩)
তিনি নভোমন্ডল
সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে অতঃপর আরশের উপর
সমাসীন হয়েছেন । তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয়
এবং যা আকাশে উত্থিত হয় । তিনি তোমাদের সাথে আছেন, তোমরা যেখানেই থাক । তোমরা যা
কর আল্লাহ তা দেখেন (সুরাঃ হাদীদ-৪)
হাদীস
১) রাসুল
(সাঃ) বলেনঃ যখন তোমরা জান্নাত চাইবে তখন ফিরদাউস ছাইবে কেননা এটি জান্নাতের
মাঝখানে আর তার উপর করুনাময় (আল্লাহর) আরশ
(বুখারী)
২)
হযরত যয়নব (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর অন্যান্য স্ত্রীগণের উপর গর্ভ করে বলতেন-
তোমাদেরকে তোমাদের পরিবারের লোকজন বিয়ে দিয়েছেন আর আমাকে বিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ । সাত আকাশের উপর থেকে (বুখারী)
৩)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে রাতে ও দিনে পালাক্রমে ফেরেশতাগণ আসেন ।
তারা আসর ও ফজর নামাজের সময় একত্রিত হন । অতঃপর যারা তোমাদের নাঝে রাত্রি কাটান
তারা উপরে উঠে যান (বুখারী)
৪)
মিরাজের ঘটনা কুরআন ও সহি সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত । রাসুল (সাঃ) কে ১ম, ২য়, ৩য় আকাশে এভাবে সপ্তম আকাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ।
তারপর তাঁকে আরো উপরে উঠানো হয়েছে ।
(যার দুরুত্ব) আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না । অবশেষে
সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছলেন (বুখারী)
৫) রাসুল
(সাঃ) ক্রিতদাসিনীকে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ
কোথায় ? সে বলল, আকাশে । আবার জজ্ঞাসা করলেন আমি কে ? সে বলল। আপনি আল্লাহর
রাসুল (সাঃ) । রাসুল (সাঃ) বললেন তাকে
মুক্ত করে দাও কেননা সে ঈমানদার (বায়হাকী, দারেমী)
৬) আবূ হুরাইরা (রাঃ)
থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের রব আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন ও বলতে
থাকেনঃ কে আছ আমার কাছে দু‘আ করবে আমি কবুল করব ৷ কে আছ আমার কাছে
চাইবে আমি দান করব ৷ কে আছ আমার কাছে ক্ষমা
প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব ৷
(বুখারী ও মুসলিম)
হানাফী মাযহাবের ইমামদের মতঃ
আমরা বিশ্বাস করি
যে আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন
। এ অবস্থায় যে, আরশের প্রতি তার কোন প্রয়োজন নেই এবং এর উপর স্থির হয়ে থাকারও কোন
প্রয়োজন নেই (শরহুল ফিকহিল আকবর পৃঃ-৬১)
তিনি (আবু মুতি, আল
বালখি) বলেন যে, তিনি আবু হানাফী (রহঃ) কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে
বলে, আমি জানি না আমার রব কোথায়, আকাশে না
পৃথিবীতে ? তিনি ( আবু হানাফী (রহঃ) বললেন, সে কাফের, কেননা আল্লাহ বলেন করুনাময় (আল্লাহ) আরশের উপর আসীন হয়েছেন ।
আর তাঁর আরশ হচ্ছে সাত আকাশের উপর । আমি বললাম যদি সে বলে আল্লাহ আরশের উপর তবে আরশ কি আকাশে না পৃথিবীতে তা আমি জানি না
। তিনি ( আবু হানাফী রহঃ) বলেন, সে কাফের
। কেননা আল্লাহ যে আকাশে সে তা অস্বীকার করেছে । আল্লাহ যে আকাশে যে একথা
অস্বীকার করে সে কাফের (শরহে আক্বীদা তহাবীয়া
পৃঃ ৩৮৭)
মরাজের ঘিটিনা সত্য
। নবী (সাঃ) কে রাত্রিকালে ভ্রমণ করানো হয়েছিল এবং জেগে থাকা অবস্থায়ই তাঁকে আকাশে উঠীয়ে নেয়া হয়েছে । তারপর আল্লাহর
ইচ্ছা অনুযায়ী আরো উপরে (শরহ আক্বীদা তাহাবীয়া পৃঃ ২৭০)
ইমাম মালিক (রহঃ)
বলেনঃ ইসতাওয়া বা সমাসীন হওয়ার কথা জ্ঞাত । অবস্থা বা স্বরূপ অজ্ঞাত । সমাসীনের উপর ঈমান আনা ওয়াজীব এবং এ সম্পর্কে
প্রশ্ন করা বিদ’আত (দারেমী ৩৩ পৃঃ)
আলোচনা
সূরা ত্বোয়া-হা
আয়াত ৪৬ ও সূরা হাদিদ আয়াত ৪ এ সাথে থাকা বলা হয়েছে । এ সাথে থাকার অর্থ তিনি জানেন, শোনেন ও দেখেন ।
সুরা হাদীদ আয়াত ৪
এ বলা হয়েছে আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন”
আবার এও বলেছেন “তিনি তোমাদের সাথে আছেন”
। এ থেকে বুঝা যায় সাথে থাক অর্থ সহ
অবস্থান নয় ।
তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডাকবে না (সুরা
কাসাস-৮৮)
তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডাকবে না (সুরাঃ
জ্বীন-১৮)
এ আয়াত দুটিতে সাথে
শব্দটি আছে । এর অর্থ মোটেই সহ অবস্থান নয়
।
বাস্তবতার আলোকে চিন্তা করুন, যদি বিশ্বের কোন
দেশের রাষ্ট্র প্রধান অন্য কোন দেশের
রাষ্ট্র প্রধান কে কোন কাজে বলে আমি তোমার সাথে আছি বা দেশের রাষ্ট্র প্রধান কোণ
ব্যক্তির কোন কাজে বলে আমি তোমার সাথে আছি । তুমি কাজটি শেষ কর আমি সব রকম
সহযোগিতা করব ।
এই সাথে থাকার মানে
কি সব সময় তারা একত্রে চলাফেরা, খাওয়া,
ঘুমানো ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে সহ অবস্থান করবে বা একে অপরের পাশাপাশি থাকবে !
এটা কোন নাবালোকেও বলবেনা ।
অতএব “আল্লাহ সাথে আছেন” এর দ্বারা সহ অবস্থান ভাবা, বলা মোটেই সহিহ আক্বিদার নয়
।
আল্লাহ বলেন- তোমরা
কি কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু
অংশ অবিশ্বাস কর (সুরাঃ বাক্বারা-৮৫)
কারন কুরআনের অনেক আয়াতে, হাদিস বলছে-মহান আল্লাহ আরশে
সমাসীন ।
সুরা বাক্বারা আয়াত
১১৫ঃ তাফসীর বিশারদগণ বলেছেন যে আয়াতটি
নামাযের কিবলা সংক্রান্ত বিষয়ে নাযিল হয়েছে ।
পূর্ব ও পশ্চিম
আমার জন্য । যেদিকেই তোমরা মুখ ফিরাবে সেখানেই আমার মুখ থাকবে আর তাই হচ্ছে
তোমাদের কেবলা (তাফসীরে ইবনে কাসির (সংক্ষিপ্ত) ১ম খন্ড ১১০ পৃঃ)
এক শ্রেণীর মানুষ
রয়েছে তারা বলে, আল্লাহ মানুষের অন্তরে বিদ্যমান ।
মানুষের অন্তরে আল্লাহ থাকলে একজন মানুষের
অন্তরে একজন আল্লাহ স্বীকার করলে বহু আল্লাহর স্বীকৃতি প্রদান হয় । আর এটা শির্ক ।
আর এক শ্রেণী রয়েছে
যারা বলে আল্লাহ সর্বত্র বিদ্যমান ।
এটা বিশ্বাস করলে
আল্লাহ কে অপবিত্র মানা হয় । কেননা পৃথিবীর সকল স্থানই পবিত্র নয় । যে স্থান অপবিত্র সে স্থানে আল্লাহ থাকলে
তাঁর মহত্ব থাকে না । তাই তিনি সর্বত্র নয় ।
আমাদের বাস্তব জীবনে-
বিভিন্ন মসজিদের
ঈমাম সাহেবগণ বিশেষ বিশেষ দিনে বলেন আল্লাহ
পাক আজ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করবেন । অতএব তোমরা এ রজনী বা দিনে বেশী বেশি করে
ইবাদত কর ।
যখন আল্লাহর কাছে
দোয়া করি তখন উপরের দিকে হাত তুলি ।
অন্যায় অত্যাচারের
প্রতিবাদের সমর্থ না থাকলে বলি
উপর আল্লাহ তোমার বিচার করবে ।
অনেকে বলে উপর ওউয়ালার ইচ্ছা । উপরওয়ালা যা ইচ্ছা তাই করেন ।
উপরোক্ত আলোচনায়
প্রতিয়মান হয় যে,
আল্লাহপাক আরশে অবস্থিত । তিনি সব জানেন, দেখেন ও শুনেন । অর্থাৎ তার
ক্ষমতা সর্বত্র ।
তিনি সব স্থানেই যা
খুশি তা করতে পারেন ।
আল্লাহ পাক পবিত্র
কুরআনের সূরা ইয়াসিন আয়াত-৮২ তে উল্লেখ করেনঃ
তিনি (আল্লাহ) যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে
কেবল বলে দেন, “হও” তখনই তা হয়ে যায় ।
আমীণ
কোন মন্তব্য নেই দেখে মন্তব্য করলাম। চালিয়ে যান ভাই। সত্যের সন্ধানে থাকুন সব সময়।
উত্তরমুছুন