আল্লাহর আকৃতি
সকল প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য, যিনি
পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে আমাদেরকে ইসলাম দান করেছেন, যে দ্বীনে মানুষের পক্ষ থেকে
কোন সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন হয় না ৷ সালাত ও সালাম তাঁরই রাসূল
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ৷ তার সাহাবায়ে কিরামের প্রতি
আল্লাহর রাহমাত বর্ষিত হোক, যারা ছিলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর আদর্শ ৷
কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নেই । তিনি সবকিছুই
শুনেন এবং দেখেন (সুরাঃ আশ-শুরা-১১)
চেহারা
কেবলমাত্র তোমার
রবের মহিয়ান ও গরিয়ান চেহারাই অবশিষ্ট
থাকবে (সুরাঃ আর রহমান-২৭)
আল্লাহর চেহারা বা সত্ত্বা ব্যতীত সব কিছু ধ্বংস হবে (সুরা আল কাসাস-৮৮)
পূর্ব ও পশ্চিম এর মালিক আল্লাহ, তোমরা যে দিকেই তোমাদের মুখমন্ডল ফিরাবে
সে দিকেই আল্লাহর চেহারা থাকবে (সুরাঃ
বাকারা-১১৫)
জাবির বিন আবদিল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হলোঃ “বল,
সেই আল্লাহ ক্ষমতা রাখেন তোমাদের উপর আযাব নাযিল করার তোমাদের উর্ধ্ব দিক হতে” রাসুল (সাঃ) বললেন, আমি তোমার চেহারার আশ্রয় চাই (বুখারী ২য় খন্ড ৬৬৬ পৃঃ ইবনু
কাসির ২য় খন্ড ১৮৯ পৃঃ)
চোখ
আল্লাহ তা’আলাকে দুনিয়ার কোন চোখ দেখতে পারে না বরং তিনিই সমস্ত চোখকে দেখতে পারেন । তিনি অতিশয় সুক্ষ্ণদর্শী এবং সর্ব
বিষয়ে ওয়াকিফহাল (আনা-আম-১০৩)
তিনি সব কিছু শুনেন ও দেখেন (আশ-শুরা-১১)
আমার চোখের সামনে আমার ওয়াহি বা নির্দেশ অনুযায়ী তুমি নৌকা তৈরী কর (হুদ-৩৭)
অতঃপর আমি তাঁর (নূহের) কাছে আদেশ প্রেরণা করলাম যে, তুমি আমার চোখের সামনে এবং আমার নির্দেশে নৌকা তৈরী কর (মু’মিনুন-২৭)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী
(সাঃ) বলেছেনঃ তোমর প্রভূ অন্ধ নন (বুখারী ২য় খন্ড ১০৫৫-১০৫৬ পৃঃ)
হাত
বরকতময় ঐ সত্ত্বা যার হাতে রাজত্ব
তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষোমতাবান (মুলক-১)
আল্লাহর দু’হাত তো উদার ও উন্মুক্ত । তিনি যেভাবেই ইচ্ছা খরচ করেন (আল মায়িদা-৬৪)
ক্বিয়ামতের দিন পুরো পৃথিবী তাঁর
হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমুহ বাঁজ করা
অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে (আয যুমার-৬৭)
বল! নিশ্চয় অনুগ্রহ আল্লাহর হাতে ।
তিনি যাকে চান তাকে তা দেন । আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ (আল ইমরান-৭৩)
আব্দুল্লাহ বিন মাসুদ (রাঃ) বর্ণিত একজন পাদ্রী রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে
বলল, হে মুহাম্মদ (সাঃ) আমরা পাই যে, আল্লাহ (ক্বিয়ামাত দিবসে) আসমানসমুহ এক
আঙ্গুলের উপর, যমীনসমুহ এক আঙ্গুলের উপর, গাছসমুহ এক আঙ্গুলের উপর পানি-কাদা এক
আঙ্গুলের উপর এবং সমস্ত সৃষ্টি এক আঙ্গুলের উপর করে বলবেন, আমি বাদশাহ । একথা শুনে
রাসুল (সাঃ) হেসে দিলেন অতঃপর রাসুল (সাঃ) পাঠ করলেন- “ তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে
বুঝেনি । ক্বিয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তার
হাতের মুঠোতে থাকবে” (বুখারী ২য় খন্ড ৭১১ পৃঃ, মুসলিম ২য় খন্ড ৩৭০ পৃঃ, ইবনু
কাসির ৪র্থ খন্ড ৮০ পৃঃ)
পা
যেদিন পায়ের পোছা বা পিন্ডলী
প্রকাশ করা হবে, সেদিন তাদেরকে সাজদাহ করতে আহবান করা হবে । অতঃপর তারা সাজদাহ
করতে সক্ষম হবে না (আল ক্বালাম-৪২)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত আমি নবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ আমাদের প্রভু তাঁর পায়ের পোছা বা পিন্ডলী
প্রকাশ করবেন । অতঃপর তাঁর জন্য সকল মু’মিন মু’মনাহ সাজদাহ করবে এবং বাকি
থাকবে ঐ সমস্ত লোক যারা দুনিয়াতে লোক দেখানো সাজদাহ করতো । তারা সাজদাহ করতে যাবে
অতঃপর তাদের পিঠ এক তাবকা বা বরাবর হয়ে যাবে (বুখারী ২য় খন্দ ৭৩১ পৃঃ, ইবনু কাসির
৪র্থ খন্ড ৫২৪ পৃঃ)
আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেছেনঃ জাহান্নামের মধ্যে
পাপীদের নিক্ষেপ করা হবে আর জাহান্নাম বলবে আরও এর থেকে বেশী আছে কি ? তিনি তাঁর পা জাহান্নামের মধ্যে রাখবেন ।
অতঃপর জাহান্নাম বলবে যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে (বুখারী ২য় খন্ড ৭১৯ পৃঃ, ইবনু
কাসির ৪র্থ খন্ড ২৮৯-২৯০ পৃঃ)
আলোচনা
আল্লাহর আকার সম্পর্কে ইমাম আবু
হানীফা (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহর মুখমন্ডল ও দেহ আছে যেমন মহান আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা
করেছেন ।
কুরআনের বর্ণনায় আল্লাহর চেহারা, হাত, দেহের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা
আল্লাহর দৈহিক বৈশিষ্ট্য । আমরা তাঁর ঐ সকল অঙ্গের বিষোদ বিবরণ অবগত নই ।
কেউ যেন আল্লাহর হাতকে কুদরতী হাত বা
তাঁর নেয়ামত না বলে । কেননা তাতে তাঁর সিফাত বা গুণাবলীকে অস্বীকার করা হয় ।
আর যারা কুদরতী হাত বলে তারা কাদরিয়াহ ও মু’আমিলাহ সম্প্রদায়ের লোক (ইমাম
আবু হানীফার ফিকাহুল আকবার মোল্লাহ আলী কারী হানাফীর শরাহসহ দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ
বৈরুত-৫৮-৫৯ পৃঃ)
জামিয়াহ ও শীয়াহ সপম্রদায়ের একটি অংশ যারা মনে করে আল্লাহ
স্বশরিরে সর্বত্র বিরাজমান এবং তাঁর আকার নেই, নিরাকার ।
আবার এক সম্প্রদায় রয়েছে যারা মনে করে আল্লাহর মানুষের মতই সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ রয়েছে ।
এভাবে আল্লাহকে সর্বত্র বিরসজমান,
নিরাকার ও মানুষের মতই বিশ্বাস করা কুফরী ও শির্ক ।
যারা এটা বলবে ও নেমে নিবে তারা
কাফির ও মুশরিক ।
উপরোক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হয় যে,
আল্লাহর দৈহিক বিবরণের মধ্যে তাঁর
চেহারা, চক্ষু, হাত, আঙ্গুল, পা রয়েছে ।
যে এগুলোকে অস্বিকার করে সে কাফের
।
আরো দেখা যায় এগুলোকে কুদরতীও বলা যাবে না এবং সৃষ্টির কোন কিছুর সাথে তুলনাও করা যাবে না ।
এরূপ কুদরতী বা তুলনা করলে শির্ক
হবে ।
মহান আল্লাহর আকার রয়েছে । তাঁর আকার কেমন, তাঁর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেমন, এটা
তিনি আমাদেরকে বলে দেননি ।
আমাদের বিশ্বাস তাঁর আকৃতি, অঙ্গ
প্রত্যঙ্গ তাঁর শান অনুযায়ী হবে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন